আগরতলা,,১১ডিসেম্বর,,
উগ্রপন্থী সমস্যা নির্মূল করার অভিযানে ত্রিপুরা পুলিশের সাফল্য নর্থ ইস্ট কাউন্সিলের বৈঠকে পথ দেখাতে পারে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে। কোন ধরনের রক্তপাত ছাড়া ত্রিপুরার ৫ দশকের বৈরী সমস্যা নির্মূল করার ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডক্টর মানিক সাহার নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র দপ্তর। মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র দপ্তর শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে কিভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায় তার ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে এক প্রকার ব্যতিক্রমী নিদর্শন রেখেছে। পার্শ্ববর্তী মনিপুর রাজ্য যখন অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জ্বলছে তখন ত্রিপুরা পুলিশের এই সাফল্য আগামী দিনের বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি।
প্রসঙ্গত ত্রিপুরা রাজ্যকে সন্ত্রাসমুক্ত করার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক ভূমিকার পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন এবং রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সুপার ডিআইজি কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তীর ভূমিকা অন্যতম। তাদের বিচক্ষণতা এবং সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের ফলেই নিষিদ্ধ বৈরী সংগঠনগুলোকে শান্তি বৈঠকের টেবিল পর্যন্ত নেওয়া গেছে এবং শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

বহু বছর যাবত উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে একাংশ বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠনের দাপট ছিল। খুন অপহরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ক্ষেত্রে মনিপুর , আসাম সহ বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি ত্রিপুরার বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ব্যাপক উপদ্রব ছিল।
ত্রিপুরার এন এল এফ টি, এ টি টি এফের নাম উত্তর পূর্বাঞ্চলের কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠনের তালিকায় অন্যতম হিসেবে উল্লেখ ছিল। এই সমস্ত জঙ্গি সংগঠনের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ রাজ্যের উন্নতির পাশাপাশি দেশের সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হয়ে উঠেছিল । ত্রিপুরাতে দীর্ঘ বছর বাম শাসনে জঙ্গিদের কার্যকলাপ কিছুটা কমলেও তার নির্মূল কোনভাবেই সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এন এল এফ টির বিশ্বমোহন গোষ্ঠী, অলিন্দ্র দেববর্মা গোষ্ঠী এবং এটিটিএফের পৃথক গোষ্ঠী বাংলাদেশের বিভিন্ন পার্বত্য ঘাঁটিতে অবস্থান করে ত্রিপুরায় বৈরী কার্যকলাপ জারি রেখেছিল। বিগত ৫০ বছরে রাজ্যের অনেক মুখ্যমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্ব নিয়ে জঙ্গি সমস্যাকে নির্মূল করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। একইভাবে অনেক পুলিশ আধিকারিক ত্রিপুরা পুলিশের মহা নির্দেশক হয়ে দায়িত্ব পালন করলেও জঙ্গি সমস্যা নির্মূল করার ক্ষেত্রে সফলতা আনতে পারেননি। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহার নেতৃত্বে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক তথা একসময়ের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দক্ষ আধিকারিক আই পি এস অমিতাভ রঞ্জনের নেতৃত্বে ত্রিপুরা পুলিশ সেই অসাধ্যকে সাধ্য করতে পেরেছে। কোন ধরনের রক্তপাত ছাড়া ত্রিপুরা পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে ত্রিপুরায় ত্রিপুরার দুটি নিষিদ্ধ বৈরী সংগঠনকে চূড়ান্ত রূপে নির্মূল করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন পুলিশ দপ্তরের মহানির্দেশক এবং গোয়েন্দা শাখার সুপারের তৎপরতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহার নেতৃত্বে শান্তি চুক্তিতে অংশ নিতে রাজি হয়েছিলেন এল এল এফ টি এবং এটিএফের কুখ্যাত বৈরী নেতারা। গত ৪ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে সন্তুষ্ট হয়ে ত্রিপুরার দুটি নিষিদ্ধ বৈরী সংগঠন তাদের দল গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
যথারীতি গত ২৪ সেপ্টেম্বর আগরতলায় পুলিশের কাছে একসাথে অস্ত্র তুলে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে কুখ্যাত দুই বৈরী সংগঠনের ৫৮৪ জন উগ্রপন্থী। এছাড়াও গত তিন বছরে ধাপে ধাপে রাজ্যের প্রায় ৮ শত উগ্রপন্থী আত্মসমর্পণ করেছেন সুরক্ষা বাহিনীর কাছে এবং অস্ত্র জমা করেছেন।
মনিপুর সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের কিছু রাজ্য যখন বিচ্ছিন্নতাবাদী বৈরী সমস্যার সমাধানে হিমশিম খাচ্ছে ঠিক এই সময়ে আগরতলার বুকে নর্থ-ইস্ট কাউন্সিলের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সূত্রের দাবি আগামী দিনের নর্থইস্ট কাউন্সিল বৈঠকে রাজ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের শান্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ত্রিপুরা পুলিশ নতুন পথ দেখাতে পারে গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলকে। একইভাবে ত্রিপুরার স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তৎপরতায় রাজ্যে প্রতিদিন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের আটক করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে কঠোরভাবে এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযানেও ত্রিপুরা পুলিশের সাফল্য দেশের মধ্যে নজিরবিহীন। এসব ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশকের চিন্তা ধারা বিশেষ ফলপ্রসু রয়েছে। বিগত দিনে কেন্দ্রীয় স্তরের একাধিক আলোচনাতেও ত্রিপুরা পুলিশের এই সাফল্য বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। প্রসঙ্গত ত্রিপুরার নিষিদ্ধ বৈরী সংগঠন এন এল এফ টি এবং এ টি টি এফ দীর্ঘ ৫ দশক ত্রিপুরায় রীতিমতো রক্তের হোলি খেলেছে। পৃথক রাজ্যের দাবিতে একটা অংশ অস্ত্র তুলে নিয়ে খুন, অপহরণ থেকে শুরু করেন দীর্ঘ বছর ত্রিপুরায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়েছে। এই উগ্রপন্থী সমস্যা ত্রিপুরার আইনশৃংখলার গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থাকার পাশাপাশি রাজ্যের উন্নতির পক্ষে বিশেষ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমান সময়ের মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশ মহা নির্দেশকের তৎপরতায় ত্রিপুরা এখন সন্ত্রাসবাদ মুক্ত।
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার বুকে আগামী দিনের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কাউন্সিল বৈঠক সেই সাফল্যের বাস্তব উদাহরণ বলেই তথ্যবিজ্ঞ মহলের দাবী।