প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা,, ১১ আগস্ট,,
বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর আক্রমণ এবং হত্যার প্রতিবাদ ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে রাজ্যে। প্রতিবাদ এবং আন্দোলন কর্মসূচি বিভিন্ন স্থানে গণবিক্ষোভের রূপ নিতে চাইছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিশেষ নজরদারি রয়েছে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের। পরিস্থিতির নিরিখে প্রতিবাদ কর্মসূচির অনুমতি থাকলেও অতিরিক্ত জমায়েত এবং বিক্ষোভ কর্মসূচির অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ প্রশাসন। রবিবার পুলিশ প্রশাসনের এমনই বিধি নিষেধে পূর্ব পরিকল্পনায় আগরতলায় গণ বিক্ষোভ করতে পারেনি বাঙালি ঐক্যবদ্ধ সমাজ। পরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত “বাঙালি ঐক্যবদ্ধ সমাজ”-র প্রতিবাদী লোকজন আগরতলা বাধারঘাট রেলস্টেশনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। তারা তারা বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর সংঘটিত অকথ্য নির্যাতন বন্ধ করা সহ হিন্দু মন্দিরে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ করেন। দাবি জানান অবিলম্বে বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার।
প্রসঙ্গত পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার দুপুর ১২ টায় আগরতলা বিবেকানন্দ ময়দানে জমায়েত এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। সেই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ত্রিপুরার গন্ডাছড়ায় শতাধিক পরিবার হিন্দু বাঙালি পরিবারের উপর হামলা এবং লুটপাটের ঘটনা সহ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে বাঙালি সমাজ এক হওয়ার ডাক দিতে চাইছিলেন আয়োজকরা।
কিন্তু শনিবার সন্ধ্যা থেকে এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কিছু অপ্রীতিকর এবং উস্কানিমূলক ভয়েস রেকর্ড সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেগুলোতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরিবর্তে রাজের সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর হামলার পরিকল্পনার ষড়যন্ত্র সামনে উঠে আসে। এরপরেই এসব ঘটনার সত্যতা যাচাই করে পুলিশ দুইজনকে আটক করে। বাংলাদেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনোভাবে যাতে রাজ্যের শান্তি সম্প্রীতির পরিবেশ বিনষ্ট না হতে পারে তার জন্য বিশেষ সক্রিয় রয়েছে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ আন্দোলন কর্মসূচির ব্যাপারে খোঁজখবর নেয় এবং স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে আন্দোলনের বিষয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পুলিশ রবিবার রীতিমতো যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নিয়ে আগরতলা রেল স্টেশনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত আন্দোলনকারীদের আটকে দেয়। তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদেরকে রেল স্টেশনেই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে ফিরে যেতে অনুরোধ করে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন খোদ পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার ডক্টর কিরণ কুমার। বাঙালি ঐক্যবদ্ধ সমাজের আন্দোলনকারীরা পুলিশের নির্দেশ মেনে নেন এবং কোন ধরনের উশৃংখলতা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে আগরতলা রেলস্টেশনে প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি সম্পন্ন করেন। তারা বাংলাদেশ বাঙালি হিন্দুদের উপর নৃশংস হামলা এবং আক্রমণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এই ধরনের ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি তোলেন ।অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেন তারা।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর হামলা এবং আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চলছে লুটপাট। নৃশংসভাবে সংখ্যালঘু বিশেষত শাখানকার হিন্দুদের উপর হামলা হচ্ছে। বাড়ি ঘরে ঢুকে হামলা এবং দোকানপাটে লুটপাট হয়েছে। অনেক জায়গায় বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে সংখ্যাগুরুদের একটি অংশ সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে চলছেন। তারপরও বিক্ষিপ্তভাবে হামলার ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। এইসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের একটা অংশের নাগরিক মহলে চাপা উত্তেজনা রয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ভিডিও এবং পোস্ট দেখে রাজ্যের সাধারনের একটা অংশ শিহরিত এবং আবেগপ্রবণ রয়েছেন। তাদের সেই আবেগকে নিয়ে একটা অংশ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগ। ষড়যন্ত্রকারীরা প্রতিনিয়ত সামাজিক মাধ্যমে উস্কানিমূলক ভিডিও এবং পোস্ট ভাইরাল করছে। শিক্ষিত এবং বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশও অতীতের ঘটনার কিংবা এক বছর আগে বাংলাদেশের সংস্কৃতি কলেজে রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য ভাঙ্গার পথ নাটকের দৃশ্য , নিজের স্বামীর নেতৃত্বে হিন্দু গৃহবধূকে বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে তুলে নেওয়ার ভিডিও , বাংলাদেশ খেলোয়াড় লিটন দাসের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ভুয়া ছবি এবং তথ্য তুলে ধরে পরিকল্পিতভাবে উস্কানি দিয়ে চলছে। পুলিশের দাবি সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশের ঘটনায় অসংখ্য ভুয়া ছবি, ভিডিও ভাইরাল রয়েছে। অনেকে সত্যতা যাচাই না করে সেগুলি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এভাবে উস্কানিমূলক ভিডিও এবং পোস্ট ছড়ানো আইনত অপরাধ। এসব ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই কয়েকজনকে নোটিশ করেছে এবং কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে বলে খবর।