প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা,, ৩ আগস্ট,,
১২ জুলাই এক জনজাতি যুবকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতভর সন্ত্রাস হয়েছে গন্ডাছড়া মহকুমায়। এক রাতে ১৬৫ পরিবারের বাড়িঘর লুটপাট হয়েছে। ভাঙচুর করে পরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেহাই দেওয়া হয়নি গৃহপালিত পশুদেরও। নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে গরু সহ অন্যান্য গৃহপালিত পশুকে। সেই বিভৎস হামলার ঘটনার পর থেকে টানা প্রায় এক মাস যাবত বাড়িঘরহারা লোকেরা গন্ডাছড়া স্কুলের হল ঘরে শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রয়েছেন। তাদের দুর্বিষহ জীবনের খবর নিতে দফায় দফায় চেষ্টা করে সেখানে আগরতলা থেকে ছুটে গেছেন সাংবাদিক এবং সমাজসেবী সংগঠন। একাধিকবার চেষ্টার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অসহায় মানুষদের সাথে তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনেছেন বিরোধী কংগ্রেস এবং সিপিআইএম দলের নেতৃত্ব।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় গন্ডাছড়ার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা মনে করছেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহা। ঘটনার পর প্রশাসনিকভাবে কিছু আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেই মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো নিজের দায়িত্ব খালাস করেছেন। বরং একটা নির্দিষ্ট অংশ থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব এবং প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মনের নামে গুজব ছড়িয়ে প্রশাসনিক প্রধান বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী গন্ডাছড়ায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহমর্মিতা দেখানো তো দূরের কথা নিজের সামাজিক মাধ্যমে তাদের বিষয়ে একটি কথাও বলেননি। একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গণ্ডাছড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহার ভূমিকা নিয়ে এবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গণ্ডাছড়ার মানুষ জানতে চাইছেন কেন এখনো মুখ্যমন্ত্রী সেই জায়গাতে যান নি। সম্প্রতি গন্ডাছড়া এলাকা পরিদর্শনের পর একই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধলেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী।
সাংবাদিক সম্মেলনে জিতেন্দ্র চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের আচরণকে ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন গন্ডা ছড়ায় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথচ মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে বসে ” হর ঘড় তীরাঙ্গার’ গল্প শোনাচ্ছেন। জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন মুখ্যমন্ত্রী যে ‘হর ঘর তীরঙ্গার’ কথা বলছেন গন্ডা ছাড়ার ১৬৫ পরিবারের তো ঘরই নেই। জিতেন্দ্র চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি যাতে অবিলম্বে ডিজি এবং মুখ্য সচিবকে সঙ্গে নিয়ে গন্ডাছড়ায় যান এবং মানুষের দুর্দশা দেখেন। প্রসঙ্গত মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডক্টর মানিক সাহাকে সজ্জন এবং ভালো মানুষ হিসেবে ব্যাখ্যা করে এতদিন সিপিআইএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব রাজনৈতিক আঙ্গিনে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব নিয়ে কোন সমালোচনা কিংবা প্রশ্ন তোলেন নি। কিন্তু এবার গন্ডাছড়ার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহাকে সরাসরি বিঁধলেন সিপিআইএম নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। গণ্ডাছড়ার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব এবং মানবিকতা বোধ নিয়েও জিতেন বাবু এদিন প্রশ্ন তুলেছেন।