প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, বিশালগড়,, ৬ জুলাই,,,
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব থেকে শুরু করে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহা। বিজেপি জোট জামানায় দুজন মুখ্যমন্ত্রীই দায়িত্ব নেয়ার পর নেশা মুক্ত সমাজ গড়ার দিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পর একজন নেশা মুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তোলার ডাক দিয়েছিলেন। আরেকজন নেশা মুক্ত সমাজ গড়ার। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে বিজেপি জামানায় নেশার সম্রাজ্যে ভাসছে গোটা রাজ্য। বিজেপি জোট জামানার গত ছয় বছরে রাজ্যের অলিগলিতে সরকারি ছাড়পত্রে গড়ে উঠেছে বিলেতি এবং দেশী মদের ঠেক। একইভাবে শাসকদলের নেতা-নেত্রীদের মততে গোটা রাজ্য ব্যাপী চলছে শুকনো এবং পাউডার জাতীয় নেশার রমরমা। নেশা মুক্ত ত্রিপুরার স্বপ্ন এখন নেশাগ্রস্ত রাজ্যের ভয়ংকর বাস্তবতার রূপ নিয়েছে। এই ভয়ংকর বাস্তবতার মধ্যে রাজ্যে এখন নেশার কবল থেকে ছাড় পাচ্ছে না স্কুল কলেজেও। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সন্ধ্যার পর ক্লাসরুম পরিত্যক্ত ঘর এবং বারান্দাগুলো এখন নেশাগ্রস্থদের কাছে নিরাপদ ঠিকানা হয়ে গেছে। স্কুলের ভেতরেই চলছে মদ্যপান। হেরোইন, ব্রাউন, সুগার কফ সিরাপ ক্রয় বিক্রয় । একাংশ স্কুলের বাউন্ডারির ভেতর এখন অবৈধ কার্যকলাপের নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে ত্রিপুরায়। এমনই একটি ঘটনায় শনিবার ক্ষোভ ছড়িয়েছে মতিনগর এলাকার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক মহলে।
সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগর বিধানসভার মতিনগর উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পরিত্যক্ত মদের বোতল, ফেন্সিডিলের বোতল এবং অন্যান্য মাদকের খালি কৌটা। অভিযোগ প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এই স্কুল মাদকাসক্তদের দখলে চলে যায়। স্কুলের ভেতরে বিভিন্ন পরিত্যক্ত ক্লাস ঘর এবং বারান্দায় এলাকার পরিচিত ছেলে এবং বয়স্কদের একাংশ পৃথক পৃথকভাবে দল করে নেশার আসর জমান। চলে জুয়া এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপ। স্কুলের দেখভালের দায়িত্বে পরিচালন কমিটি থাকলেও তারা এইসব অপকর্ম নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া দেন না। পরিচালন কমিটির উদাসীনতায় স্কুলের পরিবেশ রীতিমতো বিষিয়ে উঠেছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের ভেতরে বিলাতি মদের বোতল এবং ফেন্সিডিলের বোতল হাতে নিয়ে খেলা করছেন। শনিবার সকালেও একই ঘটনা ঘটে। ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলের ভেতরে ঢুকে ক্লাসরুমের সামনে প্রচুর পরিমাণে নেশা জাতীয় দ্রব্যের বোতল দেখতে পায়। ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশ বিষয়টি শিক্ষকদের জানান। শিক্ষকরা স্কুলের আশেপাশের অভিভাবকদের ডেকে এনে ঘটনা স্বচক্ষে দেখান। এরপরই স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্ন উঠে ম্যানেজিং কমিটি এবং স্থানীয় থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। পরবর্তী সময়ে এলাকার জনগণ প্রধান শিক্ষকের কাছে দাবি তোলেন এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের। তবে শুধুমাত্র এই মতিনগর স্কুল নয়। শহরতলীর বিভিন্ন স্কুল সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সরকারি স্কুলগুলো নেশাখোরদের জন্য নিরাপদ ঠিকানা হয়ে গেছে। এমন কি আগরতলা শহরের বুকে এমবিবি কলেজ এবং বি বি এম সি কলেজের মধ্যেও বিভিন্ন স্থানে সন্ধ্যার পর মাদকাসক্তদের ভিড় জমতে দেখা যায়। নেশা মুক্ত ত্রিপুরা বানানোর স্বপ্ন দেখানো মুখ্যমন্ত্রীরা কেন এসব বিষয় নিয়ে করা পদক্ষেপ নিচ্ছেন না তা নিয়ে নাগরিক মহলে অস্বস্তি বাড়ছে।