সংবাদ প্রতিনিধি,, আগরতলা,,২২ অক্টোবর,,
দুর্গাপূজায় আগরতলা শহরে কি নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক সহ পুলিশ এবং সাধারণ প্রশাসনের একাংশ আধিকারিক? সপ্তমীর সন্ধ্যা থেকে রাজধানীতে পুলিশ মহানির্দেশক এবং একাংশ প্রশাসন আধিকারিকের বিশাল কনভয় এবং এসকর্টের দৌরাত্ম দেখে এমনই প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ দর্শনার্থীদের মধ্যে। “নো এন্ট্রি”-র মধ্যে যেখানে আপৎকালীন যান চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে সেখানে বিশাল কনভয় নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন সহ প্রশাসনের একাংশ আধিকারিক।
প্রসঙ্গত প্রতিবারের মতো এবারো সপ্তমীর দিন সন্ধ্যা ৫টার পর থেকে রাজধানীতে “নো এন্ট্রি” জারি রয়েছে। যান সন্ত্রাসের বাইরে দর্শনার্থীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা মন্ডপ ঘুরতে পারেন এবং পূজার আনন্দ নিতে পারেন সেই জন্যই শহরে “নো এন্ট্রি” জারি করে আরক্ষা প্রশাসন। সপ্তমীর দিন সন্ধ্যার পর থেকেই সাধারণ নাগরিকদের একটা বৃহৎ অংশ যানবাহন নিয়ে পূজা দেখতে বের হয়ে “নো এন্ট্রি”-র কারণে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। “নো এন্ট্রি” পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা এতটাই বেশি রয়েছে যে ট্রাফিক পুলিশের ধমক এবং দুব্যবহারে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পরিবারের অভিভাবকরা প্রচন্ড অপমানিত বোধ করে দুর্গাপূজার দিনগুলিতে ঘর থেকে বের হতেই ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু সেই “নো এন্ট্রি”র মধ্যেই পুলিশ মহা নির্দেশক সহ প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের নেতৃত্বে চলছে এসকর্ট যান সন্ত্রাস । পুজোর ভিড়ের মধ্যেই আগরতলা শহরে দুই থেকে ততোধিক এসকর্ট গাড়ি নিয়ে পূজা দেখতে বের হচ্ছেন রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক থেকে শুরু করে প্রশাসনের একাংশ আধিকারিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সাহেবদের কনভয় এবং এসকর্টের ঠেলায় পূজোর আনন্দ মাটি হয়ে যাচ্ছে সাধারণ দর্শনার্থীদের। সপ্তমীর সন্ধ্যায় রাজনীতিতে পূজা দেখতে বের হয়েছিলেন ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন।
(সপ্তমীর সন্ধ্যায় সংহতি ক্লাবের সামনে ডিজি সাহেব সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকদের কনভয়।)
এদিন ডিজি সাহেব স্বস্ত্রীক বের হয়ে আগরতলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিক্রমা করেন। নজিরবিহীনভাবে এদিন ডিজি সাহেবকে দেখা গেছে ১৫ গাড়ির কনভয় নিয়ে পুজোর ভিড়ের মধ্যে ঘোরাফেরা করছেন । ডিজি সাহেবের সঙ্গে ছিল দুটি ব্যক্তিগত এসকর্ট গাড়ি। পাশাপাশি ছিল পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপারের গাড়ি এবং দুটি এসকর্ট সহ দুই বিভাগীয় পুলিশ সুপার এবং তাদের দুটিকরে এসকর্ট। ছিলেন সদর এসডিপিও এবং থানা পুলিশের একাধিক গাড়ি। ডিজি সাহেবের কনভয় এদিন দেশের প্রধানমন্ত্রীর কনভয়কেও রীতিমতো হার মানিয়ে দিয়েছিল। পুজোর ভিড়ে এই কনভয় যে রাস্তা ধরে গেছে সেই রাস্তা দিয়ে সাধারণ সহ আপাতকালীন পরিষেবায় যুক্ত যানবাহনের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল ট্রাফিক পুলিশ। স্বাভাবিকভাবেই অনেকে প্রশ্ন তোলেন আগরতলা শহরে কি নিরাপত্তার অভাব রয়েছে পুলিশের সর্বোচ্চ আধিকারিকের? কি এমন আতঙ্ক রয়েছে ডিজি এবং এসপি সাহেবদের যে পূজার দিনগুলোতে তারা নিরাপত্তায় ঘেরা শহরে স্বল্প এসকর্ট ছাড়া কিংবা স্বল্প এসকর্ট নিয়ে চলতে পারছেন না? শুধু ডিজি সাহেবই নয় পুজোর ভিড়ে আগরতলাতে এসকর্ট নিয়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছেন রাজ্য পুলিশের একাধিক পুলিশ সুপার, টি এস আর কমান্ডান্ট সহ কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর একাংশ আধিকারিক। এমনকি আগরতলা শহরে দুর্গাপূজার ভিড়ে পুর নীগমের মেয়রকেও দেখা যাচ্ছে দুই গাড়ি এসকর্ট নিয়ে চলাফেরা করছেন। আগরতলা শহরে মেয়রের এমন এসকর্ট নিয়ে চলাফেরার ঘটনা নাগরিক সমাজ আগে কখনো দেখেনি। সেই সাথে আগরতলা দুর্গাপূজায় সন্ত্রাস চলছে একাংশ মন্ত্রী, বিধায়ক এবং শাসক নেতাদের অপ্রয়োজনীয় যানবাহনের। যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী (ডাক্তার মানিক সাহা) জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা ছেড়ে সাদামাটা নিরাপত্তা বলয়ে চলাফেরা করছেন সেখানে পুর নীগমের মেয়র এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের দুর্গাপূজার ভিড়ে সাধারণকে অসুবিধায় ফেলে এই ধরনের এসকর্ট সন্ত্রাস জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।