প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা,, ২৪ সেপ্টেম্বর,,
কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বে শান্তি চুক্তির পর মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করল ত্রিপুরার কুখ্যাত বৈরী সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা(এন এল এফ টি) এবং অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স( এটিপিএফ) । দুই সংগঠনের পৃথক চারটি গোষ্ঠীর মোট ৫ ৮৪ জন সদস্য এদিন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অস্ত্র তুলে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান অস্থিরতার মধ্যে আটকে থাকা আরো কয়েকজন জঙ্গি সদস্য আগামী দিনে ত্রিপুরায় এসে আত্মসমর্পণ করবেন বলে সূত্রের দাবি। এদিনের মূল অনুষ্ঠান হয় আগরতলা সংলগ্ন জম্পুজলা জম্পুইজলা টিএসআর ৭ম বাহিনীর সদর দপ্তরে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহা। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের মুখ্য সচিব জে কে সিনহা, পুলিশের মহা নির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, ইন্টেলিজেন্সের মহানির্দেশক অনুরাগ ধনখর সহ অন্যান্যরা।

অনুষ্ঠানে এনএলএফটির বিশ্ব মোহন দেববর্মা গ্রুপ, প্রসেনজিৎ দেববর্মা গ্রুপ সহ এটিপিএফ এর পৃথক দুটি গ্রুপের অলিন্দ্র দেববর্মা সহ অন্যান্য নেতৃত্ব এবং সদস্য। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র তুলে দেন এনএলএফটির শীর্ষ নেতা বিশ্ব মোহন দেববর্মা সহ এটিটিএফ।
একইভাবে আত্মসমর্পণ কারীরা ১৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশের কাছে জমা করেন। এসব অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে অত্যাধুনিক পিস্তল, এবং রাইফেল রয়েছে।
দীর্ঘ ৫ দশকের উগ্রপন্থার সমস্যার অবসান করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় এন এল এফ টি এবং এটিটিএফ সদস্যদের স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী এই শান্তি চুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। প্রসঙ্গত ৪ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে রাজ্যের কুখ্যাত বৈরী সংগঠন এনএলএফটি এবং এটিটিএফ এর মধ্যে শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হয়। সেই চুক্তিতে আত্মসমর্পণকারীদের আর্থিক বিকাশের স্বার্থে ২৫০ কোটির প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে তাদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অধিকার সুনিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে উগ্রপন্থী নেতৃত্ব নিজেদের সংগঠনের অস্তিত্ব বিলীন করে অস্ত্রশস্ত্র সহ সরকারের সামনে আত্মসমর্পণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই চুক্তি অনুযায়ী মঙ্গলবার রাজ্যের সর্ববৃহৎ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান সংঘটিত হয়েছে। জানা গেছে আত্মসমর্পণকারী বৈরী দলের সদস্যদের প্রত্যেকের একাউন্টে ৪ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। আগামী তিন বছর পর্যন্ত তারা স্বাভাবিক জীবনে বসবাস করার পর তারা এ টাকা তুলতে পারবেন। তিন বছর পর্যন্ত তাদেরকে ৬০০০ টাকা করে মাসিক ভাতা দেওয়া হবে। সেই সাথে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা উগ্রপন্থী নেতাদের রাজনৈতিক অধিকার সহ আবাসন এবং একাধিক সরকারী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। রাজ্যের দীর্ঘ পাঁচ দশকের উগ্রপন্থার সমস্যার অবসান হওয়ায় শান্তিপ্রিয় মানুষ সরকারের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রসঙ্গত ২৪ সেপ্টেম্বর এই আত্মসমর্পণের খবর সর্বপ্রথম আমাদের নর্থইস্ট প্রতিধ্বনির প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল। ত্রিপুরার সর্ববৃহৎ এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডক্টর মানিক সাহার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই এই আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্তরে বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে। অন্যদিকে এই অনুষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে টি এস আর ৭ম বাহিনীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বিগত প্রায় মাসখানেক যাবত আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে আগত জঙ্গি দলের সদস্যদের রাখা-খাওয়া সহ সর্ববৃহৎ এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান পরিচালনায় বাহিনীর কমান্ডান্ডের বিশেষ ভূমিকা ছিল।