প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা ,,৩১ জুলাই,,
গণ্ডাছড়ার ঘটনায় এবার উচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী জানালো ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস। যেখানে দীর্ঘ বছর যাবত জাতি-উপজাতির মানুষ ভালবাসায় বসবাস করছেন সেখানে ১২ জুলাই হঠাৎ করে সামাজিক হিংসার ঘটনার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। মঙ্গলবার গন্ডাছড়া পরিক্রমার পর ১২ জুলাইর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তক্রমে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে উচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে নিরপেক্ষ তদন্তক্রমে বিচারের দাবি তোলা হয়েছে।
গত ১২ জুলাই গন্ডাছড়ার বিভিন্ন জায়গায় একযোগে সামাজিক হিংসার ঘটনা ঘটে। পরমেশ্বর রিয়াং নামে এক জনজাতি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই অশান্তি ছড়িয়ে ছিল। রাতে বিভিন্ন এলাকায় একযোগে বাড়িঘরে হামলা হয়। লুটপাট হয় এবং আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ প্রশাসন সেখানে উপস্থিত থাকলেও সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ। পুলিশ প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে এক রাতে প্রায় ৩ শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকাংশই এখনো শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন।
হামলা এবং হিংসার চিহ্ন হিসেবে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর এখনো একই অবস্থায় রয়ে গেছে। প্রশাসনিকভাবে তাদের বাড়িঘর ঠিকঠাক করে তাদেরকে ভিটে মাটিতে ফিরিয়ে দেওয়ার তেমন কোন সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। বরং তাদের বিভিন্ন অভিযোগ চাপা রাখতে তাদের সঙ্গে বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে মঙ্গলবার গন্ডাছড়ায় যান কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন সহ ছিলেন রাজ্যের প্রদেশ সভাপতি আশীষ কুমার সাহা। ছিলেন কংগ্রেসের বিভিন্ন জনজাতি নেতৃত্ব এবং কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্ব।
কংগ্রেস নেতৃত্ব সেখানে গিয়ে মৃত পরমেশ্বর রিয়াং এর পরিবারের সাথে দেখা করেন। তাদের অভিযোগ শুনেন এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পরবর্তীকালে তারা মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাজার, দোকানপাট এবং বাড়িঘর গুলোতে যান। কংগ্রেস নেতৃত্বকে কাছে পেয়ে কান্নার হাহাকার জুড়ে দেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। তারা অভিযোগ করেন গত ছয় বছরে সরকার তাদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় একটি ঘর দিতে পারেনি। অথচ সরকারি উদাসীনতায় তাদের মাথা গোজার কুঁড়েঘর গুলো তছনছ করে দেওয়া হয়েছে । বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন ক্ষতিগ্রস্তদের বুকে জড়িয়ে নিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরবর্তীকালে কংগ্রেস নেতৃত্ব গন্ডাছড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় শরণার্থী শিবিরে যান। সেখানে তারা শিবিরের লোকেদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। বিদায় সুদীপ রায় বর্মন মাটিতে বসে শরণার্থী শিবিরের পুরুষ মহিলাদের কাছ থেকে ১২ জুলাই রাতের ভয়ানক হামলার বিস্তারিত জেনে নেন। শরণার্থী মহিলারা কংগ্রেস নেতাদের সহমর্মিতা পেয়ে চোখের জল ভাসিয়ে দেন। কংগ্রেস নেতৃত্ব খোঁজখবর নেন ঘটনার আগে এবং পরে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। গণ্ডাছড়ার বিস্তারিত খবর নেওয়ার পর পরমেশ্বর রিয়াং এর মৃত্যু সহ বাড়ি ঘরে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের গোটা ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।