প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা,,১৩ জুলাই,,
শান্তিপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহার নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ব্যর্থতায় রীতিমতো অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অরাজকতা শুরু হয়েছে। কোথাও রাজনৈতিক হিংসা চলছে। কোথাও আবার সামাজিক হিংসার ঘটনায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একইভাবে চলছে দিকে দিকে হামলা হুজ্জতির ঘটনা। একাংশ ঘটনায় হিংসার উস্কানি এবং নেতৃত্ব দানের অভিযোগ উঠছে শাসকদলীয় বিধায়ক এবং নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ সর্বত্রই হিংসা প্রতিরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তর। ঘটনার বিবরণে জানা যায় গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একযোগে একাধিক সন্ত্রাসের ঘটনায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার বিশালগড়ে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ভয়াবহ রূপ দেখেছেন ঘনিয়ামারা এবং অরবিন্দনরের লোকজন। দিন দুপুরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে টিটু আহমেদ নামে এক কংগ্রেস নেতার বাড়ি। অভিযোগ শাসকদলের কিছু নেতা এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। আগুন লাগানোর পর দমকল ইঞ্জিনকে পর্যন্ত ঘটনাস্থলে যেতে দেওয়া হয়নি। অভিযোগ বিশালগড় থেকে দমকল ইঞ্জিন রওয়ানা হলেও বিশালগড়ের শাসক দলের শান্ত নেতার নির্দেশে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। ভাঙচুর চলে কংগ্রেসের পার্টি অফিসে। কংগ্রেসের এক মহিলা নেত্রীর উপর হামলা এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে। সেখানে এসপির নেতৃত্বে মহকুমা এবং থানা পুলিশ সন্ত্রাস রোখতে চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে অভিযোগ। দিনভর বিশালগড়ের এইসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে গন্ডাছড়াতে। দুদিন আগে গন্ডা ছড়ায় এক জনজাতি ছাত্রকে আনন্দমেলায় অমানবিকভাবে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছিল একটি নির্দিষ্ট অংশের বিরুদ্ধে। শুক্রবার জিবি হাসপাতালে সেই ছাত্রের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই গন্ডাছড়ায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ছাত্রের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি উত্তেজিত হয়ে উঠে। দোকানপাট লাগিয়ে মানুষজন বাড়ি ঘরে চলে যান। দিনে এক প্রকার অঘোষিত ধর্মঘট চলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দুপুরের পর প্রশাসনিকভাবে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছিল গতকাল। কিন্তু রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে। গণহারে নির্দিষ্ট একটি অংশের বাড়িঘর এবং দোকানপাট জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মানুষজন আত্মরক্ষায় বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। সেই ঘটনার একাধিক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনাস্থলে টিএসআর এবং পুলিশ সেখানে থাকলেও তাদেরও একপ্রকার অসহায় অবস্থায় ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। পরবর্তীকালে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা হয়।
একইভাবে বিলোনিয়া রাজনগরে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের শিকার হন চাকরিচ্যুত ১০৩২৩ শিক্ষক বাদল শীল। দুষ্কৃতীরা তার ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালায় তার মাথা ফাটিয়ে দেয় এবং প্রচন্ডভাবে মারধর করে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে বিলোনিয়া রাজনগর হাসপাতাল এবং পরবর্তীকালে জিবি হাসপাতালে আনা হয়েছে। তবে এই সমস্ত ঘটনা ছাড়াও পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক উত্তেজনা রয়েছে। অভিযোগ শাসক দলের একাংশের নেতৃত্বে সংঘটিত সন্ত্রাসের সামনে আইনের শাসন রীতিমত উধাও হয়ে গেছে। বিরোধীদের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। বরং ১০০ শতাংশ পঞ্চায়েত দখলের নামে মুখ্যমন্ত্রীর উস্কানিতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে গেছে বলে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন সহ কংগ্রেস প্রদেশ সভাপতি আশীষ কুমার সাহা অভিযোগ তুলেছেন। রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধ সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দাবিতে শুক্রবার সন্ধ্যার পর পুলিশ সদর দপ্তরে গিয়ে মহানির্দেশকের কাছে ডেপুটেশন দিয়েছে সভাপতি আশীষ কুমার সাহার নেতৃত্বে প্রদেশ কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল।
প্রসঙ্গত মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই সজ্জন এবং শান্তিপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত রয়েছেন। কিন্তু উনার বিরুদ্ধে হিংসায় উস্কানি সহ হিংসার পরিস্থিতি মোকাবেলায় উনার পুলিশ দপ্তরের ব্যর্থতা নিয়ে সাধারণ নাগরিক মহল সহ শাসক দলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।