Home জাতীয় খবর আমার কাছে ত্রিপুরা রাজনীতির নয়, প্রেম এবং প্রাথমিকতার বিষয় : প্রধানমন্ত্রী

আমার কাছে ত্রিপুরা রাজনীতির নয়, প্রেম এবং প্রাথমিকতার বিষয় : প্রধানমন্ত্রী

0

প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা,, ১৭ এপ্রিল,,

ত্রিপুরা যেটা চিন্তা করে সেটাই করে। ত্রিপুরা এবার ঠিক করে নিয়েছে ‘ফির একবার মোদি সরকার।’ ২১ শতাব্দীর বিকশিত ভারত নির্মাণে উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং ত্রিপুরার অনেক বড় ভূমিকা থাকবে।” লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে ত্রিপুরায় এসে ঠিক এই ভাবেই বক্তব্য রাখলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগরতলা বিবেকানন্দ ময়দানে বিজেপি প্রার্থীদের হয়ে বিজয় শঙ্খনাদ মহাসমাবেশে তিনি প্রায় আধ ঘন্টা ভাষণ রাখেন। ভাষনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বাংলা এবং ককবরক ভাষায় ত্রিপুরাবাসীকে শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা নিবেদন করেন। তিনি বলেন কামাখ্যার পুণ্যভূমি থেকে তিনি ত্রিপুরেশ্বরী মায়ের পূন্যভূমিতে এসেছেন। বিমানবন্দর থেকে সমাবেশ স্থল পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে তিনি ত্রিপুরাবাসীর মনোভাব বুঝে গেছেন। ত্রিপুরাবাসী ঠিক করে নিয়েছে ‘দ্বিতীয়বার মোদি সরকার।’ জন উচ্ছ্বাস দেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন বাবা-গড়িয়ার ভূমিতে মায়েদের এই উচ্ছ্বাস এতদিন যারা ত্রিপুরাকে ঠকিয়েছে তাদের রাতের ঘুম উড়ে যাবে ।তিনি বলেন ত্রিপুরা এখন আর পিছন ফিরে তাকাবে না। শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন স্বাধীনতার পর থেকে একটা দীর্ঘ সময় কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার উত্তর পূর্বাঞ্চল সহ ত্রিপুরাকে পিছিয়ে রেখেছিল। তাদের অনেকে জানতেনই না ভারতের মানচিত্রের কোথায় ত্রিপুরার রয়েছে। “নর্থ ইস্ট” পলিসির পরিবর্তে তারা পলিসি করেছিলেন “লুট ইস্ট” পলিসি। কিন্তু গত ১০ বছরে “এক্ট ইস্ট” পলিসিতে উত্তর পূর্বাঞ্চল সহ ত্রিপুরার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। “হীরা”থেকে “হীরা প্লাস ” মডেলে ত্রিপুরার হাইওয়ে, ইন্টারনেট, রেলওয়ে এবং এয়ারওয়েজ সহ-সর্ব ক্ষেত্রে অগ্রগতির কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন দিল্লি সরকার এখন উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং ত্রিপুরার উন্নয়ন নিয়ে নিয়মিত চিন্তা করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন “আমার কাছে ত্রিপুরা রাজনীতির জায়গা নয় প্রেম এবং প্রাথমিকতার বিষয়“।

প্রধানমন্ত্রী নিজের ভাষনে বিজেপি গত ১০ বছরে দেশের উন্নয়ন সহ ত্রিপুরার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের কিছু তথ্য তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে শুরু করে হর ঘর জল যোজনা, মায়েদের জন্য উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস বিতরণ, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনা গেছে। একইভাবে তিনি কমিউনিস্ট এবং কংগ্রেসের জোটকে নিয়েও তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি কেরালার প্রসঙ্গে তুলে বলেন কংগ্রেসের যুবরাজ কেরলের যে কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সেখানে সেই রাজ্যের কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এখন কংগ্রেস চাইছে সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত হোক । সেই কংগ্রেস কমিউনিস্ট ত্রিপুরাতে একসাথে মিলে ভোট চাইছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন কংগ্রেস কমিউনিস্টকে একটি ভোট দেওয়া মানেই সেই ভোটের অপচয় করা। কারণ কেন্দ্রে তারা সরকার বানাতে পারবেনা। কেন্দ্রে আবারো সরকার হচ্ছে বিজেপির। তাই বিজেপিকে ভোট দিয়ে সেই সরকার গঠনে এবং দেশের বিকাশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ত্রিপুরার নাগরিকদের আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন আগামী পাঁচ বছরে সংকল্প পত্রে গোটা দেশের সাথে ত্রিপুরার জন্যও একাধিক নতুন প্রকল্প রয়েছে। গত দশ বছরে যারা ত্রিপুরাতে ঘর পায়নি তাদের বাড়ি বাড়ি ঘরের বার্তা পৌঁছে দিতে তিনি দলীয় কর্মকর্তাদের আহ্ববান করেছেন। তিনি বলেন সংকল্প পত্রে আগামী পাঁচ বছরে দেশে আরও ৩ কোটি ঘর দেওয়া হবে। ত্রিপুরাতে এখনো যারা ঘর পাননি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই তাদের ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। পাঁচ বছর বিনা পয়সায় চাল দেওয়া হবে। তিনি বলেন দলীয় কর্মকর্তাদের মুক্তাকে দেওয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতি পালন করাই আমার দায়িত্ব। আমার গ্যারান্টি। গত দশ বছরে ত্রিপুরা এবং দেশের উন্নতিতে যা হয়েছে তাকে শুধুমাত্র ট্রেইলার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন বিকাশ এবং উন্নয়নে আগামীদিনে আরও এগিয়ে যাবে ত্রিপুরা।

আগামী দিনে ৭০ ঊর্ধ্ব প্রবীণ নাগরিকদের চিকিৎসা খরচ সরকার বহন করবে বলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন যাদের ঘরে ৭০ বছরের ঊর্ধ্ব প্রবীণ নাগরিক রয়েছেন তাদেরকে নিয়ে আর পরিবারের লোকেদের চিন্তা করতে হবে না। আগামী দিনে সরকারই তাদের চিকিৎসা খরচ বহন করবে। আগামী ১৯ এপ্রিল পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেব এবং ২৬ এপ্রিল পূর্ব ত্রিপুরা আসনে বিজেপি প্রার্থী দিদিরানী (কৃতি দেবী দেব বর্মনকে)কে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন।

ভাষণ শেষ করার আগে তিনি দলীয় কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রণাম এবং শুভেচ্ছা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এদিনের সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা, বিজেপি প্রদেশ সভাপতি রাজিব ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, পশ্চিম ত্রিপুরা আসনের লোকসভা প্রার্থী সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, পূর্ব ত্রিপুরা আসনের লোকসভা প্রার্থী কৃতি দেবী দেব বর্মন সহ অন্যান্য নেতা-মন্ত্রীরা। মহাসমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম লক্ষ্য করা গেছে। মানুষের ভিড় দেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন প্রতিবারই সমাবেশে মানুষের উপস্থিতি এবং উচ্ছ্বাস নতুন রেকর্ড তৈরি করে। ত্রিপুরাবাসীকে রামনববীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version