সংবাদ প্রতিনিধি,, আগরতলা,,৩১ ডিসেম্বর,,
রামনগরে বিধায়ক প্রয়াণের দুদিনের মাথায় লাটে উঠেছে আইন-শৃঙ্খলা। জনদরদী নেতার মৃত্যুর পরেই তাঁর আদরের জনতার উপর নির্যাতন শুরু করেছেন শাসক দলীয় উশৃংখল একাংশ। চলছে গণহারে মানুষের বাড়িঘরে হামলা। লুটপাট এবং খুনের চেষ্টা। রবিবার রাতে পেয়ারি বাবুর বাগানের সামনে গাড়ি আটকে দুই যুবককে মারধর এবং লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ। শনিবার দক্ষিণ রামনগরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কয়েকজনকে প্রচন্ড মারধর করা হয়েছে। একই রাতে এলাকার তিন-চার জনের উপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। শনিবার রাতে বেনু মিয়া নামে একজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে খুনের চেষ্টা হয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। রবিবার রাতে রাস্তায় গাড়ি আটক করে মারধর করা হয় রতন মিয়া এবং ইব্রাহিম খলিলের উপর।

এসব হামলা হজ্জতির পরও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর সাহস পাচ্ছেন না আক্রান্তদের একাংশ। থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর জন্য বাড়ি থেকে যারা বের হচ্ছেন তাদের উপর নেমে আসছে দ্বিতীয়বার হুমকি-ধমকি এবং হামলার হুঁশিয়ারি। এক কথায় হঠাৎ করেই যেন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে সদ্য প্রয়াত বিধায়ক সুরজিত দত্তের রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রে। জননেতা জীবিত থাকাকালীন সময়ে যারা নিজেদের হিংস্র মানসিকতা এবং উশৃংখল মনোভাব চরিতার্থ করতে পারেননি তারা রাতারাতি খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন।
তাদের হুমকি – ধমকি এবং হামলার মুখে আতঙ্ক বিরাজ করছে দক্ষিণ রামনগরের কিছু এলাকায়। স্থানীয় সূত্রের খবর গত দুদিন যাবত দক্ষিণ রামনগরের ১৮ নম্বর বুথের সভাপতি অমূল্যের নেতৃত্বে একটি চক্র প্রচন্ড উশৃঙ্খলতা শুরু করেছে। শনিবার রাতে অমূল্য এবং তার সাগরেদরা এলাকার নিরীহ কয়েকজন সংখ্যালঘু নাগরিককে প্রচন্ড মারধর করে।
এমনকি বেনু মিয়া নামে একজনকে বাজার থেকে তুলে নিয়ে প্রচন্ড মারধর করা হয় এবং জয়পুরে নিয়ে একটি ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে পুরো ঘর সহ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে বেনু মিয়ার পরিবারের লোকজন সহ দক্ষিণ রামনগরের মহিলারা দল বেঁধে সেখানে ছুটে যায়। গভীর রাতে এলাকার মহিলারা রাস্তায় নেমে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে বেনু মিয়াকে উদ্ধার করে আনে। রাতেই তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। একই রাতে রাস্তায় আটক করে মারধর করা হয় টমটম চালক এরশাদ মিয়াঁকে। এরশাদকেও এলাকার মহিলারা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও প্রভাবশালী মহলের চাপের মুখে হাসপাতালে ভর্তি না থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হন আহতরা । এলাকার আরো কিছু বাড়িতে রাতে হামলার অভিযোগ রয়েছে অমূল্যের নেতৃত্বে উশৃংখল বাহিনীর বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই গাড়ি আটকে লুটপাট এবং হামলার অভিযোগে স্থানীয় ঝুটন তাপস, মনতোষ, রাজকুমার সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের দাবি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এই ধরনের হামলা শুরু হয়েছে। একই ভাবে অভিযোগ করছে চাঁদাবাজির। আগেও তাদের কয়েকজনের উপর হামলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু এতদিন বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত এলাকার সব অংশের নাগরিকদের নিরাপদে রাখার জন্য সচেষ্ট ছিলেন বলে এলাকার লোকজন সুরক্ষিত ছিলেন। বিধায়ক মৃত্যুর দু দিনের মধ্যেই উশৃংখলতায় ছেয়ে গেছে রামনগরের একাংশে। আশ্চর্যের বিষয় হলো আক্রমণের শিকার হয়েও প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না নির্যাতিত পরিবার গুলো। তারা ডাক্তার দেখিয়ে নিরবে বাড়িতে গিয়ে নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন। অনেকেই ভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেননি। এমনকি সাংবাদিকরা তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে সেখানেও তারা অভিযুক্তদের নাম কিংবা বিস্তারিত কিছু জানাতে চান নি। কিন্তু বুথ সভাপতির নেতৃত্বে এই ধরনের হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ রয়েছেন স্থানীয় শান্তিপ্রিয় নাগরিক মহল। এলাকার শান্তি- শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্থানীয়দের মধ্যে কয়েকজন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ দক্ষিণ রামনগরে গিয়ে আক্রান্ত পরিবারের লোকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পুলিশ হামলার ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। কিন্তু তারপরও পুলিশ হামলাকারী বুথ সভাপতি কিংবা অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে দ্বিতীয়বার হামলার আতঙ্ক বিরাজ করছে । সূত্রের দাবি শাসক দলীয় বুথ সভাপতির নেতৃত্বে এই ধরনের হামলার ঘটনায় এলাকার মহিলারা নিরাপত্তার দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের সামনে যে কোন সময় ঘেরাও করতে পারেন।