প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা,, ২১ আগস্ট,,
রাজ্যে ভয়ানক হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। বুধবার সকাল ৮:৩০ থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত পশ্চিম জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ১২৩মিলিমিটার। গতকাল রাত থেকে সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৮২ মিলিমিটার। আরো বৃষ্টিপাতের ভারী সতর্কতা জারি করা হয়েছে আবহাওয়া দপ্তর থেকে।মুষলধারায় বৃষ্টিতে বিপদ সীমায় বইছে হাওড়া নদীর জল। আগরতলা শহরের রাস্তাঘাট সহ ডুবে গেছে একাংশের মানুষের বাড়িঘর। মঙ্গলবারই বন্যা কবলিত হয়েছিল কাটাখালের আশপাশ এলাকা সহ রাজধানীর দক্ষিণ চন্দ্রপুর, বলদাখাল, কাশিপুর , রেশমবাগান প্রকৃতি এলাকা। বুধবার সকাল থেকে সেই সমস্ত এলাকার বন্যা দুর্গতদের অবস্থা আরো শোচনীয় রয়েছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে শিবিরে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। প্রসঙ্গত গত ৭২ ঘণ্টা যাবৎ রীতিমতো টানা বর্ষণ রয়েছে রাজ্যে। বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপের প্রভাবে প্রায় সব জেলাতেই কম বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তিন দিনের বৃষ্টিতে ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে রাজ্যের অধিকাংশ জেলা। গোমতী নদী, হাওড়া নদী, মনু, বিজয় নদী সহ রাজ্যের ছোট-বড় সমস্ত নদী গুলিতে জলস্তর বিপদ সীমার মধ্যে বইছে।
মঙ্গলবার থেকেই বন্যা প্লাবিত রয়েছে আগরতলা শহর সহ রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রয়েছে যে মঙ্গলবার রাতে প্রশাসনিকভাবে সতর্কতা জারি করে ডুম্বুর জলাশয়ের একটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিতে রাজ্যে রীতিমতো লাল সর্তকতা জারি করা হয়েছে। ২১ এবং ২২ আগস্টের জন্য সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এন ডি আর এফ, বিভিন্ন টিএসআর বাহিনী সহ দুর্যোগ মোকাবেলা বাহিনীকে প্রশাসনের তরফে মাঠে নামানো হয়েছে। সদর মহকুমায় দক্ষিণ চন্দ্রপুর, আড়ালিয়া, বলদাখাল সহ প্রভৃতি এলাকা গতকাল থেকে জলবন্দী রয়েছে। সেই সমস্ত এলাকায় মানুষজন ভীষণ অসুবিধায় রয়েছেন। প্রশাসনিকভাবে বোট দিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করা হচ্ছে। বাড়ি ঘরে শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে এবং অস্থায়ী শিবিরে দুর্গতদের স্থানান্তরিত করা হচ্ছে।
রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের পরিস্থিতির নিরীখে আসাম থেকে অতিরিক্ত এনডিআরএফ টিম মাঠে নামানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে আগরতলা বিমানবন্দর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা ডঃ পার্থ রায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বুধবার রাত পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত জারি থাকবে। রাতের পর থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমতে পারে। আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা জানিয়েছেন গত ২৪ ঘন্টায় পশ্চিম জেলায় সর্বাধিক ১৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সকাল সাড়ে আটটার পর থেকে দুপুরে বারোটা পর্যন্ত পশ্চিম জেলা শাসকের অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী বৃষ্টি হয়েছে ১১৭ মিলিমিটার। এছাড়াও সিপাহীজলা, গোমতী, দক্ষিণ জেলা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত থেকে জারি থাকা বৃষ্টিতে রাজধানী শহরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। আগরতলা শহরের অধিকাংশ জলমগ্ন রয়েছেন।
রাজধানীর অধিকাংশ দোকানপাট, যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেকে বাড়ি ঘরে আটকে রয়েছেন। প্রশাসনিকভাবে খিচুড়ি এবং অন্যান্য খাবার তৈরি করে দুর্গতদের কাছে পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছে। বর্তমান প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে দল মত নির্বিশেষে সবাই একসাথে দূর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও আগরতলার দক্ষিণচন্দ্রপুর সহ বিভিন্ন স্থানে বন্যা দুর্গতদের খাবার বিতরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ দেখে দেখে শাসক দলীয় লোকেদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে যারা দুর্গত রয়েছেন এবং বাড়ি ঘরে আটকে আছেন তাদেরকে বোট দিয়ে উদ্ধার কিংবা তাদের বাড়িতে খাবার পাঠানোর কোন ধরনের তৎপরতা নেই।
Recent Comments