প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা,, ১৪ই আগস্ট,,

কথায় আছে প্রদীপের নিচে অন্ধকার। রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের একাংশ দুর্নীতিবাজের কারণে ঠিক এমনই অবস্থা হয়েছে রাজ্যে হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচির। প্রধানমন্ত্রী আহবানে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গোটা রাজ্যে তিরঙ্গা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ঠিক এই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে থাকা শিক্ষা দপ্তরের বুনিয়াদি স্তরে প্রথম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের তিরঙ্গা অর্থাৎ জাতীয় পতাকার রং ভুল শেখানো হচ্ছে। রাজ্যের বুনিয়াদি শিক্ষা দপ্তরের অধীন সরকারি স্কুলের প্রথম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে ভুল রয়েছে জাতীয় পতাকার রং। তিরঙ্গা উপরে গেরুয়া মাঝখানে সাদা এবং নিচে সবুজ থাকার কথা থাকলেও পাঠ্য বইয়ে রয়েছে হলুদ রং।
রাজ্য সরকারিভাবে স্বীকৃত স্কুলের প্রথম শ্রেণীর অংক পাঠ্য বইয়ের নাম “আনন্দময় গণিত”। জাতীয় শিক্ষা গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ পর্ষদের অনুমোদিত এই বইটি তৈরি করেছে ত্রিপুরা সরকারের শিক্ষা গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ পর্ষদ এক কথায় এসসিইআরটি। বইটি ছাপানো হয়েছে বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশের ‘কে সি প্রিন্টিং অ্যান্ড অ্যালায়েড ওয়ার্কস’ থেকে। এই বইয়ের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪ এর মার্চ মাসে। এরপর থেকেই এই বইটিকে রাজ্য সরকারের সমস্ত স্কুলে দেওয়া হয়েছে এবং এই বই থেকে স্কুলে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। হাজারো ছাত্রছাত্রী এই বই থেকে নিজেদের বুনিয়াদি শিক্ষা নিচ্ছেন। বইয়ের ৬ নম্বর পাতায় জাতীয় পতাকার ছবি (বিকৃত) দিয়ে জাতীয় পতাকা এবং পতাকার রং সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ভাবে এনসিইআরটি অনুমোদিত এসসিইআরটির প্রকাশিত বইয়ে জাতীয় পতাকার ছবিকে রীতিমত বিকৃত করা হয়েছে। জাতীয় পতাকার গেরুয়া রং সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়নি। মাঝখানে অশোক চক্রকেও সঠিকভাবে দেখানো হয়নি। নিচে সবুজ রং এর পরিবর্তে হলুদ রং দেওয়া হয়েছে।

অংক বইয়ের ৬ নম্বর পাতায় উপরে জাতীয় পতাকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছে সেগুলির মধ্যেও ছোটখাটো ভুল রয়েছে। গত মার্চ মাসের পর থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুলে এই ভুল জাতীয় পতাকার ছবি প্রতিদিন দেখতে পারছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এমনকি বর্তমানে তিরঙ্গা কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে রাজ্যব্যাপী লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হচ্ছে কিন্তু শিক্ষা দপ্তর কিংবা এসসিআরটি পাঠ্য বইয়ের বিকৃত জাতীয় পতাকা নিয়ে কোন সংশোধন , বিবৃতি দিচ্ছে না। একাংশ ক্ষেত্রে সচেতন শিক্ষক এবং অভিভাবকরা নিচের হলুদ রং -র পরিবর্তে সবুজ লিখে ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু গ্রাম পাহাড়ে প্রথম শ্রেণীর অনেক ছাত্র-ছাত্রী নিজেদের পাঠ্য বই থেকে জাতীয় পতাকার বিকৃত রূপ দেখে তিরঙ্গা সম্পর্কে ভুল ধারণা নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এত বড় ভুল কিভাবে বই ছাপানোর আগে ধরা পড়েনি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল তা নিয়ে শিক্ষক এবং সচেতন অভিভাবক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমান সময়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন রাজ্যব্যাপী তিরঙ্গা কর্মসূচি এবং তিরঙ্গা অভিযান শুরু করেছেন তখন একাংশ ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবক জানতে চাইছেন তিরঙ্গা দেখতে কি রকম ? প্রথম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে তিরঙ্গার ভুল শিক্ষা ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিকতায় সুদূরপ্রসারি প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনোবিজ্ঞানীদের অভিমত। কারণ প্রথম শ্রেণীর শিশু ছাত্রদের শিক্ষকরা তিরঙ্গার নিচের রং সবুজ হিসেবে বারবার বলে দিলেও বইয়ের পাতায় জাতীয় পতাকার নিচে সবুজের পরিবর্তে হলুদ রং দেখে শিশুদের মনে যে ধারণা তৈরি হবে সেটা সংশোধন করতে অনেকদিন সময় লেগে যেতে পারে। শিক্ষা দপ্তরের অধীন এসসিইআরটির এই ভুল অনেকেই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না। অভিযোগ উত্তর প্রদেশের সংশ্লিষ্ট ছাপাখানার সাথে মিলে এস সি ই আর টি একাংশ পাঠ্য বই ছাপানোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি করেছেন। দুর্নীতি করতে গিয়ে তারা দেশের জাতীয় পতাকাটিও সঠিকভাবে ছাপানোর প্রয়োজনীয়তা মনে করেন নি এবং বিকৃত করেছেন। একাংশ মনে করছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে বদনাম করতেই দপ্তরের কয়েকজন আমলা পাঠ্য বইয়ে জাতীয় পতাকাকে বিকৃত করেছেন। তাছাড়া এ বছর এসসিইআরটি থেকে দেওয়া পাঠ্য বইগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের এবং মাস না যেতেই পাঠ্যবই ছিঁড়ে পাতা খুলে পড়ছে বলে অভিভাবক মহলের অভিযোগ। বর্তমানে হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচির সময়ে একাংশ অভিভাবক মহল এই বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর করতে চাইছেন। অভিভাবক মহল গোটা ঘটনায় সুস্থ তদন্তক্রমে অবিলম্বে এসসিইআরটির সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী তুলেছেন। একইভাবে প্রথম শ্রেণীর এই অংক পাঠ্য বই সংশোধনের দাবী তুলেছেন
Recent Comments