প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা,,২৩ এপ্রিল,,
স্কুলের ভেতরে নাবালিকা ছাত্রীদের সাথে অশ্লীল আচরণ এবং শ্লীলতাহানির বিরুদ্ধে এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করল বোধজঙনগর থানার পুলিশ। একদল অভিভাবক মহিলা স্কুলের স্কুলের ভেতরে ঢুকে ওই শিক্ষককে জুতাপেটা করে পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। গুণধর শিক্ষকের নাম যতন সূত্রধর (৫৮)। তিনি পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার অধীন খয়েরপুর দলুরা খাঁস নোয়াগাঁও জুনিয়র বেসিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক।

অভিযুক্ত শিক্ষক যতন সূত্রধর
মঙ্গলবার সকাল ৯ টা নাগাদ স্কুলের ভেতরে ঢুকে ওই শিক্ষককে বেধড়ক গণধোলাই দেন কয়েকজন মহিলা। টেনেহিঁচড়ে শিক্ষকের জামা কাপড় ছেড়ে দেওয়া হয়। স্কুলের ভেতরে ঢুকে শিক্ষককে এভাবে মারধরের অভিযোগে পাল্টা মামলা নিয়ে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় অভিযুক্ত শিক্ষক যতন সূত্রধর বরাবরই লম্পট স্বভাবের। তার বাড়ি খয়েরপুর এলাকাতেই।শিক্ষক যতন সূত্রধরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি স্কুলের শিশু ছাত্রীদের সঙ্গে অশ্লীল কথাবার্তা বলেন এবং তাদেরকে নোংরা ভাবে শরীরে হাত দেন। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া নাবালিকাদের ব্যায়াম শেখানোর নাম করে অনেকদিন যাবত তাদের শার্ট খুলতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন যাবত স্কুলের ছাত্রীদের সাথে শিক্ষকের অশ্লীল কর্মকান্ড চলছে বলে অভিযোগ। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার এলাকার পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে পিটি শেখানোর নাম করে জামা খুলে তার সাথে অশ্লীল আচরণ করেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ শিক্ষক জোর করে ছাত্রীর গায়ে হাত লাগান এবং তাকে শারীরিক নির্যাতন করেন। ছাত্রীটি বাড়িতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং সমস্ত ঘটনা তার মাকে খুলে বলে। এরপরই সেই ছাত্রীর মা অন্য অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন। আরো কয়েকজন ছাত্রী এই শিক্ষকের অশ্লীল কথাবার্তার কথা তাদের অভিভাবকদের জানিয়েছিল। শিক্ষকের অশ্লীল কাণ্ডকারখানার খবর পেয়ে অভিভাবকরা পুরো বিষয়টি স্থানীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন বলেও সূত্রের দাবি। এরপরই সিদ্ধান্ত হয় শিক্ষককে হাতেনাতে ধরে উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে। সেই পরিকল্পনায় মঙ্গলবার সকালে স্কুলে হানা দেয় একাংশ অভিভাবক। মহিলারা স্কুলের ভেতরে গিয়ে ঐ শিক্ষককে প্রচন্ডভাবে গণধোলাই দেন। কয়েকজন জুতা খুলে শিক্ষক মশাইকে জুতা পেটা করেন এবং তার শরীরের সার্ট এবং গেঞ্জি ছিঁড়ে খুলে ফেলেন।
শিক্ষক মশাই আত্মরক্ষার জন্য অনেক আকুতি করলেও তাকে রেহাই দেওয়া হয়নি। এমনকি স্কুলের সহকর্মী শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরা কেউ শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি। ইচ্ছেমতো পিটিয়ে এই শিক্ষককে পুলিশের হাতে তুলে দেন অভিভাবকরা। স্থানীয় মহলের দাবি এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আগেও এই ধরনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আগে তিনি খয়েরপুর নোয়াগাঁও স্কুলে ছিলেন। সেখানেও তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণের অভিযোগ উঠেছিল। সেখানেও ছাত্রীদের সঙ্গে অশ্লীলতার অভিযোগে এই শিক্ষককে গণধোলাই দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। তখন তাকে নোয়াগাঁও স্কুল থেকে বদলি করে খাস নোয়াগাঁও স্কুলে প্রাত বিভাগে বদলি করা হয়। এই স্কুলের দায়িত্ব নিয়ে আসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একই ধরনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তবে কোন অভিভাবক এসব অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়নি। পুলিশকে না জানিয়ে মঙ্গলবার কয়েকজন অভিভাবক নিজেরাই আইন হাতে তুলে নেয় এবং শিক্ষককে স্কুলে ঢুকে মারধর করেন। সেই মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এভাবে স্কুলে ঢুকে শিক্ষককে গণধোলাইয়ের ঘটনায় বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে । বোধজঙনগর থানার পুলিশ পুরো ঘটনায় পৃথক পৃথক দুটি মামলা নিয়েছে। নাবালিকা ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ মূলে শিক্ষক যতন সূত্রধরের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি এবং পকশো আইনের মামলা নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে স্কুলে ঢুকে সরকারি কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগে পুলিশ পৃথক একটি মামলা নিয়েছে এবং নির্যাতিত ছাত্রীর বাবা সহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে।এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি উঠেছে স্থানীয় নাগরিক মহল থেকে।
Recent Comments