সংবাদ প্রতিনিধি,, আগরতলা,, ৭ ডিসেম্বর,,
বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’এর প্রভাবে গত ২৪ ঘন্টা যাবত হালকা বৃষ্টিপাত জারি রয়েছে রাজ্যে। আগরতলা সহ রাজ্যের প্রায় অধিকাংশ মহকুমাতে বৃহস্পতিবার দিনভর বৃষ্টিপাত হয়েছে। দিনভর ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। স্কুল কলেজ এবং অফিস আদালতে উপস্থিতি স্বাভাবিকের তুলনায় কম ছিল। তবে বছরের এই সময়ের অকাল বৃষ্টিতে ভারী ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাজ্যের কৃষকরা। বৃষ্টির কারণে জমির পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক ভাইয়েরা। ক্ষতি হয়েছে শীতকালীন অন্যান্য শাক সবজিরও।


বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়ে মাথায় হাত পড়েছে চাষীদের।
তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কৃষকদের জন্য সুখবর দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আগামী ২- ৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের আবহাওয়াতে পরিবর্তন আসবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কাটিয়ে রাজ্যের সব মহাকুমাতেই বন্ধ হতে পারে বৃষ্টিপাত। শুক্রবার সকাল থেকে সূর্যের আলো উত্তাপে শুষ্কতা ফিরতে পারে প্রকৃতির বুকে। বৃষ্টিপাতের প্রভাব খাটিয়ে রাজ্যে বাড়তে পারে শীতের দাপট। আগরতলা বিমানবন্দর আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ বছর এমনিতেই শীত কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। ডিসেম্বর থেকে হালকা শীতের অনুভূতি পাওয়া গেলেও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আকাশ মেঘে ঢাকা পড়ে। শীত আটকে গিয়ে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। গত ২৪ ঘন্টায় স্বল্প এবং মাঝারি পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে রাজধানী আগরতলা সহ রাজ্যের প্রায় সব মহকুমাতে। বৃহস্পতিবার দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১.৮ ডিগ্রি এবং ১৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বছরের এই সময়ের তুলনায় প্রায় পাঁচ ডিগ্রি উপরে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যাচ্ছে মেঘলা দিনে শীতের ভাব থাকলেও তাপমাত্রা ততটা শীতল নয়। আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আকাশ ক্রমশ পরিষ্কার হবে । মেঘ পরিষ্কার আকাশে বাড়বে শীতের দাপট। আবহাওয়াতে নতুন কোন প্রতিকূলতা তৈরি না হলে সপ্তাহের মধ্যেই ধেয়ে আসতে পারে উত্তরের কনকনে হিমেল উত্তরে হওয়া। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগে রাজ্যে জাঁকিয়ে শীত পড়তে পারে বলে আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস।
সারা ভারত কৃষক সভার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সাংবাদিক সম্মেলন নিয়ে বিবৃতি——-
রাজ্যের কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে রাজ্যের খাদ্য জনসংভরন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর সাথে এক ডেপুটেশনে মিলিত হয় রাজ্য কৃষকসভার এক প্রতিনিধি দল।সাম্প্রতিক ধান কেনা নিয়ে যে সরকারী বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছে তাতে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে তাতে কৃষকসভা আপত্তি জানিয়েছে।একই সঙ্গে এই ধান কেনার ব্যাপারে এক শ্রেণীর অসাধু দালাল ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করে যা বিগত দিনে দেখা গেছে।এর ফলে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে বলে প্রতিনিধি দলের পক্ষে রাজ্য কৃষকসভার সম্পাদক পবিত্র করে অভিযোগ করেন ।একই সঙ্গে প্রতি মরসুমে ধান তোলার সাথে সাথে ধান ক্রয়ের করার ঘোষণা সরকারের তরফে দেবার দাবিও কৃষক সভা করেছে।

কৃষক সভার সাংবাদিক সম্মেলন।
সাংবাদিক সম্মেলনে পবিত্র করে বলেন রাজ্য সরকারের কৃষকদের সহায়ক মূল্য দেয়ার ঘোষণা নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে নির্বাচনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন (ডঃ স্বামীনাথনের C2+50% প্রস্তাব ) তার পরিপন্থী।তিনি বলেন এখন রাজ্য সরকার প্রতি কেজিতে ২১ টাকা৮৩ পয়সা দেবার ঘোষণা করেছে রাজ্য কৃষকসভার দাবি ২৮টাকা ৮৩ পয়সা।মন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি মেনে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথাবলে চুড়ানত করবেন বলে জানান।পবিত্র কর বলেন কৃষকদের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় কেরালা সরকার দামের ওপর অতিরিক্ত ৪০টাকা বোনাস হিসেবে যেমন দিচ্ছে ঠিক তেমনি ত্রিপুরার সরকারও যাতে দেয় তার দাবি জানান।একই সঙ্গে ধান ক্রয়ের জন্য যে ৪৯টি কেন্দ্র বাছাই করেছে সেখানে একটিও উপজাতি এলাকা নেই।বিকল্প হিসেবে ৫৮ টি ব্লকে খোলা হলেও সমস্যার অনেকটা সমাধান হতে পারে বলে মন্ত্রীকে জানিয়েছেন।মন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া কৃষক সভার দাবি ছিল ধান তোলার সাথে সাথে ধান ক্রয়ের জন্য সরকার যাতে তারিখ ঘোষণা করে।তা না হলে দালাল চক্র প্রকৃত কৃষকদের কাছ আগেই ধান কিনে ধান বিক্রি করা থেকে বঞ্চিত হয়। মন্ত্রী মহোদয় এই গুলো বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন।নভেম্বর মাসের বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখনো কোনো সাহায্য পায়নি বলে সাংবাদিক সম্মেলনে পবিত্র কর অভিযোগকরেন। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত জি এম পি নেতা প্রণব দেববর্মা মানদাই ,হেজামারা, তুলাশিখর, রূপাইছড়ি প্রভৃতি জায়গায় ধান ক্রয়ের কেন্দ্র খোলার দাবি জানান।মন্ত্রী মহোদয় এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি কাঞ্চনপুর ও জমপুই এলাকায় স্বস্তি সমবায়ের কিষান সম্মান কোনো উপজাতি বা অনুপজাতি কৃষক পাননি বলে অভিযোগ করেন।রাজ্য কৃষক সভার সহ সম্পাদক রতন দাস কৃষকদের ধানের বাজার পর্যন্ত আসতে পরিবহন খরচের ভর্তুকি দাবি করে বলেন তা না হলে কৃষকের পকেটে ১৫/১৬ টাকার বেশি থাকেনা।অত্যন্ত ভালো ও সহৃদয়তার মন্ত্রী আজকের আলোচনায় মতামত দিয়েছেন সেজন্য কৃষকসভার পক্ষ থেকে পবিত্র কর তাঁকে ধন্যবাদ জানান। এই তিন জন ছাড়াও প্রতিনিধি দলে ছিলেন কৃষক নেতা নারয়ণ দেব ও বাবুল দেবনাথ।
Recent Comments