প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, বিশালগড়,, ১৪ মে,,
২০২১ সালে জিবি হাসপাতাল থেকে আন্তর্জাতিক এটিএম প্রতারক হাকান জাম্বুরকান পলায়নে মাস্টারমাইন্ড ছিল স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা। এবার সে-ই পালিয়ে গেল কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে । স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা রাজ্যের নিষিদ্ধ এল এল এফ টি জঙ্গি গোষ্ঠীর স্বঘোষিত নেতা। পুলিশে ধরা পড়ার পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গত প্রায় আট বছর যাবত সে জেলে ছিল বলে খবর। মঙ্গলবার সকালে কোন এক সময় সে কারা রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে পালিয়ে যায়।
ছবি: জেল পলাতক স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা
স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ৪ নম্বর গেটের পর গার্ড কমান্ডারের পাশে সিঙ্গেল রুমে ছিল। সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোররাত ১টা পর্যন্ত এই সিঙ্গেল রুম সেলের গার্ড কমান্ডার ছিলেন মফিজ মিয়া। ভোররাত একটার পর মঙ্গলবার সকাল সাতটা পর্যন্ত গার্ড কমান্ডার ছিলেন অমল দেববর্মা। অন্যদিকে স্বর্ণকুমারের সেলের সামনে সেন্ট্রি ডিউটিতে ছিলেন ভানুপদ দেববর্মা। তাদের দাবি রাতে সে নিজের তালা বন্ধ সেলের ভেতরেই ছিল। গার্ড কমান্ডারের রুমের পাশে এই সেল গুলোতে কুখ্যাত সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। রাতে সেল গুলোর বাইরে করা নজরদারি থাকে। কিন্তু প্রতিদিন সকালে নিয়ম মেনে ভোর ৫টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কয়েদিদের সেলের দরজা খুলে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে সকালের স্নান খাওয়ার কাজ সেরে কয়েদিরা ১১ টার মধ্যে পুনরায় নিজের সেলের মধ্যে ফিরে আসেন। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে বের হওয়ার পর স্বর্ণকুমার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেলে ফিরেন নি। তখনই শুরু হয় তার খোঁজখবর। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পর কারা রক্ষীরা বুঝতে পারেন স্বর্ণকুমার জেল থেকে পালিয়ে গেছে। বিষয়টি জানানো হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। জেলের ভেতরে বিপদ সংকেত বাজিয়ে সমস্ত কয়েদিদের নিজেদের সেলে ঢোকানো হয়। কিন্তু সংশোধনাগারের ভেতরে কোথাও স্বর্ণকুমারকে খোঁজ পাওয়া যায়নি। সূত্রের দাবি সংশোধনাগারের ভেতরে ৫০ টির উপর সিসি ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা দীর্ঘদিন যাবত অচল রয়েছে। জেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার দেবাশীষ শীল এই সিসি ক্যামেরা মেরামত করার কোন উদ্যোগই নেননি। অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা অচল থাকায় স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা ঠিক কোন দিক দিয়ে কিভাবে জেলের ভেতর থেকে পালিয়ে ছিল তা কিছুই ধারণা করতে পারছেন না কারা কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে ত্রিপুরার কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে কুখ্যাত এনএলএফটি জঙ্গি স্বর্ণকুমারের পালিয়া যাবার খবর ক্ষনিকের মধ্যেই জানাজানি হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিপাহীজলা জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার , আইজি প্রিজন এ রমেশ রেড্ডি সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। কিন্তু রাতে খবর লেখা পর্যন্ত সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ পলাতক কয়েদির খবর বের করতে পারিনি। এই ঘটনায় সংশোধনাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার দেবাশীষ শীলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ এই ঘটনায় কারা রক্ষীদের কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। মোটা টাকার বিনিময়ে সংশোধনাগারের ভেতরের কয়েকজন এই পলায়নের ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে মদত দিয়েছে। প্রসঙ্গত ২০২১ সালে রাজ্য পুলিশের হাতে ধৃত তুর্কি নাগরিক তথা আন্তর্জাতিক এটিএম প্রতারক হাকান জাম্বুরকান জিবি হাসপাতাল থেকে পলায়নের ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড ছিল এই স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা। স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা নিজেও এর আগে দুইবার কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার এবং সাবজেল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। এবার ফের একবার কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের নিরাপত্তাকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে সে সেলের ভেতর থেকে রীতিমত গায়েব হয়ে গেছে। এই ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত হলে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার সহ আরো কয়েকজন দরখাস্ত হতে পারেন বলে সূত্রের দাবি।
Recent Comments