সংবাদ প্রতিনিধি,, আগরতলা,, ৫ আগস্ট,,,
রাজ্যের সোনামুড়া মহাকুমার দুটি বিধানসভায় উপনির্বাচন ঘোষণা হতে এখনো কিছুটা দেরী থাকলেও প্রার্থী চয়ন শুরু করে দিয়েছে শাসক দল বিজেপি। দুটি বিধানসভা কেন্দ্রেই নির্ণায়ক ভোটার হিসেবে চিহ্নিত রয়েছেন সংখ্যালঘু মুসলিম অংশের ভোটাররা। তাই দুটি কেন্দ্রে বিজেপির জয়ের ক্ষেত্রে প্রার্থী চয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। দুটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে একটি আসনে ভাজপা নেতৃত্ব নিশ্চিতভাবে সংখ্যালঘু প্রার্থী দিতে চাইছেন বলে খবর। দলীয় সূত্রের খবর বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রে মুসলিম ভোটার সর্বাধিক। তাই সেই কেন্দ্র বিজেপি সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের একজনকে প্রার্থী করতে চাইছে। পাশাপাশি বক্সনগর কেন্দ্রে এমন একজন যোগ্য সংখ্যালঘু নেতাকে দল টিকেট দিতে চাইছে যাকে ভর করে প্রতিবেশী ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রেও সংখ্যালঘু ভোট নিজেদের দখলে টানা যাবে। অর্থাৎ এমন একজন সংখ্যালঘু নেতাকে দল প্রার্থী করতে চাইছে, যার গ্রহণযোগ্যতা গোটা সোনামুড়া মহাকুমা সহ রাজ্যের সার্বিক সংখ্যালঘু নাগরিক মহলে রয়েছে। বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রে ২০২৩ নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী করেছিল তোফাজ্জল হোসেনকে। কিন্তু ভোটের লড়াই এলাকার সিপিআইএম প্রার্থী (প্রয়াত )শামসুল হকের ধারে কাছেও যেতে পারেননি তোফাজ্জল হোসেন। জনসমর্থনের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন তোফাজ্জল হোসেন। তার কথাবার্তা এবং চলন সংখ্যালঘু নাগরিকদের অনেকেরই অপছন্দ বলে বিধানসভা কেন্দ্রে গুঞ্জন রয়েছে। শুধু তাই নয় ২০২৩ নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজয়ের পর তাফাজ্জল হোসেন এলাকার সিপিআইএম বিধায়ক (প্রয়াত) শামসুল হককে নিয়ে অনেক কটুক্তি করেছিলেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস নিয়েও তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তোফাজ্জল হোসেনের কর্মকান্ডে বিজেপি দলের সাথে সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটারদের ব্যবধান অনেক বেশি বেড়ে যায়। ফলে সেই কেন্দ্রের ভোটারদের একটা বৃহৎ অংশের সমর্থনে ঘাটতির কারণে ভাজপা নেতৃত্ব উপ নির্বাচনে তোফাজ্জল হোসেনকে বাদের তালিকায় রাখতে চাইছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
অন্যদিকে ভাজপার রাজ্য কমিটির নেতা জসিম উদ্দিন দীর্ঘদিন যাবত বিজেপিতে থাকলেও সংখ্যালঘু মহলে উনার ততটা জনপ্রিয়তা নেই। ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সময় রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে কুরবানী ঈদ, বাংলাদেশ ইস্যু সহ বিভিন্ন কারণে একটা অংশের সংখ্যালঘু মানুষজন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ২০২১ সালে খোদ জসিম উদ্দিন সাহেবের বাড়ির পাশে কুরবানী ঈদের আগে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। ভাজপার একাধিক নেতা সামনে এসে সংখ্যালঘু নাগরিকদের পাশে দাঁড়ালেও কোন ঘটনাতেই জসীমউদ্দীন সাহেবকে একবারের জন্যও নির্যাতিতদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে দেখা যায়নি। তিনি বরাবরই নিজের পদ নিয়ে কৃষ্ণনগর পার্টি অফিস পর্যন্ত নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখে গেছেন। জনসমর্থনের প্রচারে কোনদিন নিজেকে সাধারণ সংখ্যালঘ বংশের নাগরিকদের সাথে মেলানোর চেষ্টা করেননি। তার এই ব্যক্তি কেন্দ্রিক মানসিকতায় রাজ্যের সার্বিক সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে জনসমর্থনের ক্ষেত্রে তিনি কোন জায়গা করতে পারেননি। এই অবস্থায় বর্তমান সময়ে যেসব সংখ্যালঘু নেতা ভাজপায় রয়েছেন তাদের মধ্যে টিকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক এগিয়ে আছেন দলের সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি শাহ আলম মজুমদার।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী শাহ আলম মজুমদার সোনামুড়া মহকুমার বাম বিরোধী আন্দোলনের অত্যন্ত পুরনো মুখ হিসেবে পরিচিত। তিনি আজীবন রাজ্য বামফ্রন্ট দলের হেভি ওয়েট নেতা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের মুখোমুখি হয়ে ধনপুরে কংগ্রেসের টিকিটে লড়াই করেছেন। ২০১৮-র আগে তিনি বিজেপি দলে যোগদান করেন এবং ভাজপা দলের হয়ে রাজনীতির মাঠে নিজের পৃথক পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। বর্তমান সময়ে শাহ আলম মজুমদার ভাজপা দলের একমাত্র নেতা যিনি বিজেপি দলের একনিষ্ঠ কর্মী হলেও কখনো নিজের ধর্মকে নিয়ে আপোষ করেননি। তিনি জাতী-উপজাতি, হিন্দু মুসলিম, বৌদ্ধ- খ্রিস্টান সব অংশের নেতা-নেত্রীসহ মানুষের সঙ্গে মিশে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবকা ‘সাথ সবকা বিকাশ এবং সবকা বিশ্বাস’-র নীতিতে কাজ করছেন।
বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী এবং সংখ্যালঘু নেতা হিসেবে গত সাত বছর যাবৎ তিনি মাঠে রয়েছেন। কিন্তু কোনদিন তিনি মাথার ইসলামী টুপি খোলেননি , কিংবা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের এক ওয়াক্ত বাদ দেননি। যার ফলে রাজ্যের মুসলিম অংশের একটা বৃহৎ অংশের নাগরিক মহলে এই ভাজপা নেতার প্রতি বিশেষ ধরনের সম্মান এবং বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। একইভাবে দলের নীতি-আদর্শের প্রতি সততা এবং নিষ্ঠার জন্য তিনি বিজেপি রাজ্য সভাপতি থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত স্নেহভাজন হিসেবে পরিচিত রয়েছেন। শাহ আলম মজুমদার রাজ্যের প্রথম ভাজপা মুসলিম নেতা যিনি কুরবানী ঈদের আগে দলের নিয়ম নীতির মধ্যে থেকেই সংখ্যালঘু নাগরিকদের নির্ভীক হয়ে কুরবানী ঈদ পালন করার বার্তা দিয়ে থাকেন। তিনি রাজ্যের প্রথম বিজেপি সংখ্যালঘু নেতা যিনি উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ভয় তুচ্ছ করে গ্রাম পাহাড়ে গিয়ে জবর দখলকৃত ওয়াকফ সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। শাহ আলম মজুমদার সোনামুড়া মহাকুমার ভূমিপুত্র। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সোনামুড়া মহকুমার নাগরিকদের সুখ দুঃখের সাথী হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। মহকুমার যে কোন নাগরিকের অসুবিধায় তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বিদেশের মাটিতে কাজ করতে গিয়ে রাজ্যের যুবকদের যখন কোন অঘটন ঘটে তখন তিনি তাদের সাহায্যে দেশ-বিদেশ এক করেদেন। বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি হওয়ার পর থেকে বিজেপি এবং মুসলিম ভোটারদের মধ্যে জনসম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রে শাহআলম মজুমদার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে প্রশংসার পাত্র হয়ে উঠেছেন। শাহ আলম মজুমদার বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর গত বিজেপির প্রতি সংখ্যালঘু বিশেষত মুসলিম নাগরিকদের আগ্রহ বেড়েছে। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে তার বাস্তব প্রমাণ পেয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। সোনামুড়া মহাকুমার ধনপুর, বক্সনগর সহ বিশালগড় বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির দখলে মুসলিম ভোট তুলনামূলক বেড়েছে বলে দলীয় তথ্যে উঠে এসেছে। সূত্রের দাবি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে এখন যে সমস্ত সংখ্যাগুলো নেতা রয়েছেন তারমধ্যে জনসমর্থনের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছেন শাহ আলম মজুমদার। এই জনপ্রিয়তার নিরীক্ষায় দল উপনির্বাচনে বক্সনগর কেন্দ্রে তাকে প্রার্থী করতে পারে। বক্সনগরে ভাজপা শাহ আলমকে প্রার্থী করলে প্রতিবেশী ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রেও সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারন সেই কেন্দ্রেও শাহ আলম মজুমদারের বিশেষ জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব রয়েছে। সেই কেন্দ্রে বিজেপি যাকেই প্রার্থী করুক শাহ আলমের সমর্থকদের ভোট বিজেপির দখলেই যাবে। মুসলিম অংশের জনপ্রিয় নেতা শাহ আলমকে বক্সনগরের প্রার্থী করলে বিজেপি খুব সহজেই জয় ছিনিয়ে আনতে পারবে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বিজেপি দলের রাজ্য নেতৃত্ব যে কয়েকজনের নাম বক্সনগরের প্রার্থী তালিকায় রেখে এগিয়ে চলছে তারমধ্যে শাহ আলম অন্যতম একটি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার পর খুব শীঘ্রই শাসক দলের বিজেপি সোনামুড়া মহকুমার দুটি আসনে প্রার্থী নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে। সূত্রের দাবি আগস্ট মাসের শেষের দিকেই উপনির্বাচন ঘোষণা হতে পারে। শাসক দলের বিপরীতে বিরোধী সিপিআইএম এবং কংগ্রেস দল দুই কেন্দ্রের উপ নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা জারি রেখেছে। ধনপুর এবং বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেস সিপিএম আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে লড়াই করতে পারি বলে খবর।
Recent Comments