Sunday, October 19, 2025
Google search engine
Homeত্রিপুরার খবরআগরতলা খবরমুসলিম বাড়িতে বাৎসরিক কালীপূজা; সম্প্রীতির বার্তা খয়েরপুরে।

মুসলিম বাড়িতে বাৎসরিক কালীপূজা; সম্প্রীতির বার্তা খয়েরপুরে।

প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা,, ১৯ অক্টোবর,,

প্রতিবছরের মতো এবারো দীপাবলীতে মুসলিম বাড়িতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কালী পূজা। আগরতলা শহর সংলগ্ন খয়েরপুর পশ্চিম নোয়াবাদী এলাকার কাসেম মিয়া নিজের বাড়িতে পূজা করছেন মাতা ত্রিপুরেশ্বরীর। কাসেম মিয়ার বাড়িতে গত ১৫ বছর যাবত প্রতিষ্ঠিত রয়েছে ত্রিপুরেশ্বরী কালী মায়ের প্রতিমা । প্রতিবছর দীপাবলিতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে এই পূজার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। ৩৪ বছরের যুবক কাসেম মিয়া নিজেই কালী পূজার সমস্ত নিয়ম নীতি পালন করেন এবং মায়ের পূজা দেন। এবারো কাসেম মিয়ার বাড়িতে কালীপূজাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতিবেশী হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন এই পূজাকে কেন্দ্র করে সম্প্রীতির আনন্দে মেতে উঠেছেন।  শনিবার মুসলিম বাড়িতে কালী পূজার আয়োজনে গিয়ে দেখা গেল ব্যাপক ব্যস্ততা। মন্দিরের সাজগোজ এর কাজ থেকে শুরু করে ব্যস্ততা রয়েছে ঠাকুর ঘরের সামনে আলপনা আকার। কাসিম মিয়া সহ প্রতিবেশী হিন্দু মা-বোনেরা পূজার যাবতীয় কাজ করছেন। যদিও বাড়িতে গেলে কাসেম মিয়া ক্যামেরার সামনে এসে কিছু বলেননি। তার এক বন্ধু পূজার প্রস্তুতির বিষয়টি তুলে ধরেন।

(ভিডিও দেখতে প্লে বাটনে ক্লিক করে চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন)

অন্যদিকে অফ ক্যামেরায় কাসেম মিয়া জানিয়েছেন ২০১০ সালে তিনি স্বপ্নে প্রাপ্ত নির্দেশে নিজের বাড়িতে ত্রিপুরেশ্বরী মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে নিয়মিত তিনি বাড়িতে নিয়ম মেনে মায়ের পূজা করেন।

প্রতিবছর দীপাবলীর আমাবস্যা তিথিতে বড় করে মায়ের বাৎসরিক পূজা হয় । কাসেম মিয়া বলেন ত্রিপুরেশ্বরী মায়ের প্রতি তার এক ভিন্ন ধরনের আবেগপ্রবণ মানসিকতা এবং শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়েছে। স্বপ্নে প্রাপ্ত নির্দেশের পর তিনি নিজের বন্ধু শোভন পালের সহায়তায় মায়ের মাটির মূর্তি তৈরি করেন। সেই মূর্তি নিজের ঘরে প্রতিষ্ঠা করেন এবং শুরু হয় পূজার্চনা। কাসেম মিয়া বলেন তিনি নিজেও জানেন না ঠিক কিভাবে মুসলিম ধর্মের লোক হয়েও ত্রিপুরেশ্বরী মায়ের প্রতি তার এই আঘাত ভক্তি তৈরি হল। কিন্তু এখন তিনি মাকেই(ত্রিপুরেশ্বরী কালী মাতা) নিজের জীবনের সবকিছু মনে করছেন এবং মায়ের ভক্তির জন্য নিজের সমস্ত কিছু ছাড়তে রাজি আছেন। তিনি আরো বলেন নির্দিষ্ট একটি ধর্মে জন্মগ্রহণ করে সেই ধর্মীয় রীতিনীতির ঊর্ধে উঠে অন্য কোন ধর্মের দেবদেবীর প্রতি আস্থা রেখে পূজার্চনা করার বিষয়টি ততটা সহজ ছিল না। প্রথম দিকে তাকে এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অনেক সামাজিক গ্লানি এবং সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনেকে তার এই ভক্তিকে বিকৃত করে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনাও করেছেন। কিন্তু সমস্ত রকম প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি মায়ের পূজার্চনা ছাড়েননি।

ক্রমশ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। তার ভক্তির সামনে হার মানে সমস্ত ধরনের প্রতিকূলতা। বর্তমান সময়ে এলাকার উভয় সম্প্রদায়ের লোক তার এই ভক্তিকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এবং তাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করছেন। কাসেম মিয়া বলেন এখন তার একমাত্র ইচ্ছা মায়ের জন্য একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এটা করতে গেলে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন সেটা তার কাছে নেই। মায়ের আশীর্বাদে একদিন তিনি সেই লক্ষ্য পূরণ করবেন বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছেন। কাসেম মিয়া আরো বলেন বিগত কয়েক বছর যাবত তার বাড়ির এই পূজার অনুষ্ঠানে বহু সংখ্যক লোকের সমাগম হয়। অনেক নেতা ,মন্ত্রী ,বিধায়ক তার বাড়ির পূজাতে অংশগ্রহণ করেন। এবারো তিনি নিজের বাড়িতে কালী পূজার অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ একাধিক মন্ত্রী বিধায়ককে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সমাজকে বার্তা দিতে গিয়ে কাসেম মিয়া বলেন “শ্রদ্ধা এবং ভক্তির কাছে ধর্ম কোনদিনই বাঁধা হতে পারে না। মানুষকে সেটা বুঝা উচিত।” তিনি আরো বলেন মুসলিম ধর্মের মধ্যে থেকেই তিনি কালী মায়ের প্রতি নিজের ভক্তি অক্ষুন্ন রাখতে চাইছেন।

Desk Northeast Pratidhoni
Desk Northeast Pratidhoni
NorthEastPratidhoni, office: Khaja Manzil, Laddu chowmoni, West noabadi, Agartala, Tripura , India.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments