Monday, June 30, 2025
Google search engine
Homeত্রিপুরার খবরআগরতলা খবরভিকি খুনে মহিষ চোরের ভূমিকায় পুলিশ; খুনিদের ছেড়ে 'ঘন্টার' পেছনে ছুটছে মানুষ!

ভিকি খুনে মহিষ চোরের ভূমিকায় পুলিশ; খুনিদের ছেড়ে ‘ঘন্টার’ পেছনে ছুটছে মানুষ!

প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা,, ৪ মে,,

টাকার লোভে রীতিমতো নগ্ন হয়ে গেছে পশ্চিম জেলা পুলিশের একাংশ। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ, সাংবিধানিক আইন সমস্ত কিছুকে বিসর্জন দিয়ে বেআইনিভাবে রাতের অন্ধকারে এলাকার লোকেদের নিয়ে পুলিশ হামলে পড়ছে অসহায় পরিবারের মেয়েদের উপর। নিয়ম ভেঙ্গে রাতের অন্ধকারে যুবতী মেয়েকে তুলে আনা হচ্ছে থানায়। যুবতী মেয়েকে ভিড়ের সামনে নিজের ব্যাগ খুলে তল্লাশি দিতে বাধ্য করছেন পুলিশের একাংশ। মানবাধিকার লংঘন করে পুলিশের সামনে কলেজ পড়ুয়া যুবতী মেয়েকে হেনস্তা করা হয়েছে। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু রাতের ঘটনার পর শনিবার দুপুর বারোটা পর্যন্ত সরকারিভাবে সুস্মিতা সরকারের বোনকে গ্রেফতারের কোন খবর নেই

এই ঘটনার পর পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে স্থানীয় মহলের ক্ষোভ আরো বেড়ে গেছে। অভিযোগ দুর্গা প্রসন্ন দেব হত্যাকাণ্ডে পশ্চিম জেলা পুলিশ মহিষ চুরির গল্পের চোরেদের মত মানুষকে বিভ্রান্ত করে ঘন্টার পেছনে ছুটতে বাধ্য করছেন। চঞ্চল্যকর এই খুনের মামলায় পুলিশ মানুষের চিন্তা ভাবনাকে দুর্গা প্রসন্ন দেবের প্রেমিকা সুস্মিতা সরকারের পরিবারের দিকে ধাবিত করে মুখ্য অভিযুক্তদের পার পাইয়া দেওয়ার চেষ্টা চলছে

পুলিশ সুস্মিতা সরকারকে গ্রেফতারের পর তার অসুস্থ মাকে জিবি হাসপাতালে নজর বন্দি করে রেখেছে। শুক্রবার গভীর রাতে এলাকার কয়েকজনকে নিয়ে সুস্মিতার বাড়িতে গিয়ে রীতিমতো হামলে পরে পুলিশ। পুলিশ সুস্মিতার ছোট বোন প্রতিমা সরকারকে রাতের অন্ধকারেই বাড়ি থেকে তুলে আনে বলে অভিযোগ। যুবতী মেয়েকে রাস্তায় জন ভিড়ের মধ্যে স্পর্শকাতর অবস্থায় দাঁড় করিয়ে তার ব্যাগের তল্লাশি করা হয়। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সেই ঘটনার ভিডিও পরে পুলিশের মদতেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু শনিবার দুপুরে খবর লেখা পর্যন্ত পুলিশের কাছে সুস্মিতার বোনকে গ্রেফতারের কোন সরকারি তথ্য নেই।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও প্রসঙ্গে পুলিশের দাবি এলাকার কিছু লোক ক্ষোভের মুখে শুক্রবার রাতে সুস্মিতা সরকারের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল। পুলিশ তখন সেখানে গিয়ে সেই যুবতী মেয়েকে নিরাপত্তার জন্য সেখান থেকে উদ্ধার করে আনে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে সুস্মিতার বাড়িতে হামলাকারীদের কেন পুলিশ গ্রেফতার করল না তা নিয়ে পুলিশের কাছে কোন সুস্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি। তাছাড়া একাংশ সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সুস্মিতা সরকারের পরিবার থেকে নাকি কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স এবং বহু সংখ্যক ব্যাংকের পাস বই উদ্ধার হয়েছে। এই বিষয়েও পুলিশের কোন আধিকারিক কোটি টাকা উদ্ধারের সত্যতা স্বীকার করছেন না। অভিযোগ সুস্মিতা সরকারের পরিবারকে পুলিশ হেনস্তা করলেও এই খুনের মামলায় মুখ্য অভিযুক্ত রাজু বর্মন সহ অন্য কাউকেই পুলিশ এখনো গ্রেফতার করছে না, কিংবা গ্রেফতারের চেষ্টাও করছে না। প্রথমদিকে পুলিশ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে গ্রেপ্তার করেছে ভারতরত্ন সংঘ ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি প্রদ্যুৎধর চৌধুরীকে।

ষাটোর্ধ্ব সেই বৃদ্ধকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে এক প্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরীর কিছুটা প্রভাব থাকায় পুলিশ তাকে নিয়ে তেমন কোন গল্প তৈরি করতে পারেনি। তারপরই পুলিশ এই খুনের মামলায় গ্রেফতার করেছে খুন হওয়া দূর্গা প্রসন্ন দেবের প্রেমিকা হিসেবে পরিচিত সুস্মিতা সরকারকে। সুস্মিতা সরকার মোহনপুর কলেজের ছাত্রী। সুস্মিতার পরিবার গরিব পরিবার হিসেবে পরিচিত। তার বাবা শ্রমিক। মা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সেই প্রতিষ্ঠানেই সুস্মিতার মায়ের সঙ্গে কাজ করেন মৃত দুর্গা প্রসন্ন দেবের বোন। সেই সুবাদে তাদের দুই পরিবারের মধ্যে পরিচয় হয়। অভিযোগ সেই পরিচয়ের পর থেকেই দূর্গা প্রসন্ন দেব সুস্মিতা সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষী সুস্মিতা সরকার প্রভাবশালী দূর্গা প্রসন্ন দেবকে কিছুতেই না করতে পারছিল না। একইভাবে সে দুর্গা প্রসন্ন দেবের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি এবং প্রস্তাব মেনে নিতে পারছিল না। দুর্গা প্রসন্ন দেব সময়ে অসময়ে সুস্মিতা সরকারের বাড়িতে গিয়ে বসে থাকতো এবং তাকে নানাভাবে হয়রানি করত বলে অভিযোগ। সুস্মিতা সরকার এই বিষয়টি ভারতরত্ন সংঘ ক্লাবে দুর্গা প্রসন্ন দেব বিরোধী গ্রুপের কাছে জানিয়েছিল। সূত্রের দাবি এর মধ্যেই নিগোসিয়েশন বাণিজ্য নিয়ে দুর্গা প্রসন্ন দেবের বিরোধ বাড়তে থাকে রাজু বর্মন গ্রুপের সাথে। রাজু বর্মন গ্রুপ দুর্গা প্রসঙ্গ দেবকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনায় নেহাত মহড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল নিরীহ গরিব পরিবারের কলেজ ছাত্রী সুস্মিতা সরকারকে। খুনের পরিকল্পনাকারীরা জানতো সুস্মিতা সরকার দুর্গা প্রসন্ন দেবের হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইছে। তারা এটাও জানতো দুর্গা প্রসন্ন দেব সুস্মিতা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চাইছে। খুনিরা এই দুজনের দুর্বল মানসিক অবস্থানের সুযোগ নিয়ে খুনের পরিকল্পনা করেন। খোদ পুলিশের একটি সূত্রের দাবি সুস্মিতা সরকার চেয়েছিল দুর্গা প্রসন্ন দেবকে একটা শিক্ষা দিতে কিন্তু সে হত্যার পরিকল্পনায় ছিল এমনটা এখনো বলা যায় না। সুস্মিতা দুর্গা প্রসন্নকে শিক্ষা দিতে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর কথায় রাজি হয়ে ফোনের রাতে দুর্গা প্রসন্ন দেবকে শালবাগান হাতীপাড়া নির্জন স্থানে ঢেকে নিয়ে যায়। সুস্মিতা সেদিন হোয়াটসঅ্যাপ কল করে দুর্গা প্রসন্ন দেবকে শালবাগান হাতিপাড়ায় ডেকেছিল বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। খুনের আগে সুস্মিতা একটি স্কুটি নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। তার সঙ্গে আরেকটি বাইকে ছিল তিনজন। সুস্মিতা সরকারের ধারণা ছিল দুর্গা প্রসন্ন দেবকে সেখানে ‘জম্পেশ ধোলাই’ দেওয়া হবে। তাই সে বাইকে থাকা তিন আততায়ীকে দুর্গা প্রসন্ন দেব পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে স্কুটি নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।

কিন্তু আততায়ীরা ‘ধোলাই’ এর পরিবর্তে গুলি করে হত্যা করে দুর্গা প্রসন্ন দেবকে। পুলিশ সূত্রের দাবি সম্ভবত সুস্মিতা সরকার এই খুনের পরিকল্পনার ব্যাপারে স্পষ্টভাবে জানত না। তবে দুর্গার প্রসন্ন দেবকে ঘটনাস্থলে নেওয়ার ক্ষেত্রে সে খুনিদের মদত করেছিল । তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর দুর্গা প্রসন্ন দেব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জানাজানি হতেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে সুস্মিতা সরকার সহ তার গোটা পরিবার। কারণ সুস্মিতা সরকারের মা এবং পরিবারের অন্য লোকেরাও সুস্মিতার কাছ থেকে পুরো বিষয়টি জেনে গিয়েছিল। দুর্গা প্রসন্ন দেব হত্যাকাণ্ডের পর দিনেই প্রচন্ড মানসিক চাপে উচ্চ রক্তচাপে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুস্মিতা সরকারের মা ওমা সরকার। তিনি বর্তমানে জিবী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাড়িতে আতঙ্কগ্রস্ত ছিল সুস্মিতার ছোট বোন প্রতিমা সরকার এবং সহজ সরল বাবা।

জিবি হাসপাতালে সুস্মিতার বাবা।

পুলিশ শুক্রবার গভীর রাতে সুস্মিতার ছোট বোন প্রতিমাকে বাড়ি থেকে আটক করে অন্য কোথাও নিয়ে রেখেছে। (গ্রেপ্তার করেনি) সুস্মিতার বাড়ির সমস্ত সদস্যের মোবাইল ফোন সহ ব্যাংকের নথিপত্র পুলিশ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশের একাংশ এই ঘটায় সুস্মিতা সরকারকে মুখ্য অভিযুক্ত হিসেবে সামনে তুলে আনতে চাইছে বলে অভিযোগ। কিন্তু পুলিশের আরেকটি মহল দাবি করছে সুস্মিতা শুধুমাত্র মহড়া ছিল। সুস্মিতার বিয়ে ঠিক হয়ে রয়েছে বিদেশে থাকা একটি যুবকের সাথে। কিন্তু সেই বিয়ে হতে দিচ্ছিল না দুর্গা প্রসন্ন দেব। আগামী দিনে পুলিশ সেই বিদেশে থাকা যুবকের সঙ্গে কথা বলে তার সম্পর্কে থাকা লোকেদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে পুলিশ ।

তবে পুলিশের এই মোড় ঘুরানো তদন্তের মধ্যেই চারদিন পার হয়ে গেছে। পুলিশ এখনো খুনে ব্যবহৃত শুটার, খুনের অস্ত্র কিংবা মৃতের স্ত্রীর অভিযোগ অনুযায়ী খুনের মুখ্য অভিযুক্ত রাজু বর্মন এবং তার গ্রুপকে গ্রেফতার করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ রয়েছে। পুলিশের এই ব্যর্থতার পেছনে মোটা টাকার গন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ। তবে পুলিশের এই চেষ্টার মধ্যে সুস্মিতা সরকার এবং তার গোটা পরিবার প্রচন্ড মানসিক চাপ এবং জনরোষের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। পুলিশের মোড় ঘোরানো তদন্ত এই অসহায় পরিবারের সদস্যদের প্রাণহানির কারণ হতে পারে বলেও একাংশের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Desk Northeast Pratidhoni
Desk Northeast Pratidhoni
NorthEastPratidhoni, office: Khaja Manzil, Laddu chowmoni, West noabadi, Agartala, Tripura , India.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments