Sunday, June 29, 2025
Google search engine
Homeত্রিপুরার খবরআগরতলা খবরভারত-বাংলা সীমান্তে কাঁটাতারের বাইরে বসবাসরত মানুষদের সমস্যা নিয়ে কৃষক সভার কনভেনশন, বৃহত্তর...

ভারত-বাংলা সীমান্তে কাঁটাতারের বাইরে বসবাসরত মানুষদের সমস্যা নিয়ে কৃষক সভার কনভেনশন, বৃহত্তর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত ।

প্রেস বিবৃতি,,আগরতলা,,৮ মে,,

ত্রিপুরায় ভারত-বাংলা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে যে সকল মানুষ বসবাস করছেন তারা দীর্ঘদিন ধরেই দুর্বিষহ যন্ত্রণা ভোগ করে চলেছেন। বিশেষ করে ২০১৮ সালে রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর এই সমস্যাগুলো ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময় বিভিন্ন প্রশাসনিক সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত মিটিয়ে নেবার ফলে তখন কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে যারা বসবাস করেন তাদের চাষাবাদ থেকে শুরু করে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে তেমন কোনও বড় ধরণের সমস্যা তৈরি হতো না। তাছাড়া বামফ্রন্ট সরকারের সময় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এসব সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। কিন্তু বর্তমানে বিজেপি-তিপ্রা মথা-আই পি এফ টি জোট শাসনে রাজ্য সরকার, পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কিংবা জেলা ও মহকুমা প্রশাসন সমস্যা সমাধানে কোনও দায়িত্বই পালন করছে না। আজ সারা রাজ্য থেকে আগত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে বসবাসরত মানুষ এ কথাগুলোই বারবার উচ্চারণ করছিলেন। আজ সারা ভারত কৃষক সভার রাজ্য কমিটির উদ্যোগে আগরতলায় কৃষক সভার রাজ্য কার্যালয়ে কাঁটাতারের বাইরে বসবাসরতদের নিয়ে একদিনের একটি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। এই কনভেনশনেই তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবিতে সারা ভারত কৃষক সভা ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আজ কনভেনশন পরিচালনার জন্য গঠিত সভাপতিমণ্ডলীতে ছিলেন কৃষক সভার রাজ্য সভাপতি অঘোর দেববর্মা, মতিলাল সরকার, আব্দুল সামাদ ও সন্তোষ দেবনাথ। কনভেনশনে প্রারম্ভিক আলোচনা করতে গিয়ে কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক পবিত্র কর বলেন, রাজ্যে উগ্রপন্থী সমস্যার জন্যই তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার ভারত-বাংলা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলো। তখন কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে যে জমি রয়েছে তা চাষাবাদ করতে কৃষকদের কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু গত ছ-সাত বছরে রাজ্যে বিজেপি শাসনে এই সমস্যা বেড়েছে। তিনি বলেন, বি এস এফ নিজেদের মর্জি মতো কাজ করার ফলে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে বসবাসরত মানুষ কিংবা সেখানে যাদের কৃষিজমি রয়েছে, সেখানে জীবনযাপন অতিবাহিত করা এবং চাষাবাদ করা একরকম অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শুধু চাষাবাদ কেন, কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে বসবাসরত মানুষ জীবনযাপন ও স্বাভাবিক কাজকর্মই করতে পারছেন না। পবিত্র কর বলেন, কৃষক সভা মোটামুটিভাবে হিসেব করে দেখেছে, সারা রাজ্যে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে প্রায় একান্ন হাজার কানি কৃষিজমি রয়েছে এবং এখনও প্রায় দশ হাজার পরিবার বসবাস করছেন সেখানে। এই মানুষগুলোর অধিকাংশই কৃষিজীবী এবং বি এস এফ ও রাজ্য প্রশাসনের অমানবিক আচরণের ফলে একরকম মনুষ্যেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, গণ্ডাছড়া, করবুক, গোবিন্দবাড়ি, সাব্রুম প্রভৃতি এলাকার যে সব জায়গায় এখনও কাঁটাতারের বেড়া হয়নি, সেখানকার জুমিয়া পরিবারগুলোকে জুম চাষ করতে পর্যন্ত বাধা দিচ্ছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা। কোথাও কোথাও কাঁটাতারের বেড়ার দরজা খোলা ও বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে বি এস এফ কোনও নিয়ম না মানার ফলে বেড়ার বাইরের মানুষ চিকিৎসা থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে লেখাপড়া এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠানেও যোগদানের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে এত বিশাল পরিমাণ কৃষিজমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে, অথচ সেখানে সেচের ব্যবস্থা করতে রাজ্য সরকার কোনও ভূমিকাই পালন করছে না। পবিত্র কর জানান, কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে বসবাসরত মানুষ বিশেষ করে কৃষকদের সমস্যা সমাধানের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে। এজন্য কৃষক সভা চলতি মে মাসে যেসব মহকুমায় এই সমস্যা রয়েছে সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আগামী এক থেকে পনের জুনের মধ্যে সারা রাজ্যেই প্রতিটি জেলা শাসকের অফিসে বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রতিপালিত হবে এবং গণডেপুটেশনের মাধ্যমে দাবিসনদ পেশ করা হবে। এজন্য কনভেনশন থেকে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে দশদফা দাবিসনদও গৃহীত হয়েছে। দশদফা দাবিসনদের দাবিগুলো হলো – সীমান্তে কাঁটাতারের গেইট সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে, প্রতি কৃষক পরিবারের কৃষিকাজে যুক্ত কৃষি শ্রমিক সহ সকলকে যাতায়াতের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা শাসকের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থায়ী পাশ দিতে হবে, চাসবাসের সরঞ্জামবগরু মহিষ ট্রাক্টর সহ সমস্ত ধরণের কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে যাবার ও ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা রাখতে হবে, ধান গম ও সমস্ত মরশুমে সকল রকমের ফসল করার সুযোগ দিতে হবে এবং ফসল তুলে আনার ব্যবস্থা রাখতে হবে ও গেইট বন্ধ থাকা অবস্থায় ফসল পাহারার ব্যাবস্থা করতে হবে, সকল প্রকার সব্জি ফুল ফল চা লেবু সহ অন্যান্য অর্থকরী ফসলের চাষ করার সুযোগ দিতে হবে, রাতে সীমান্তে হাইভোল্টেজ লাইট লাগাবার ফলে একদিকে পোকা আক্রমণের ফলে ফসল নষ্ট হলে ও ফসল ঝলসে গেলে সরকারকে তার সমস্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, কাঁটাতারের বেড়ার গেইটের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং কাঁটাতারের বেড়ার বাইরের জমিতে জলসেচের ব্যবস্থা করতে হবে ও সোলার যুক্ত পাম্প দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে, কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বসবাসকারী সমস্ত পরিবারকে বসবাস ও অবাধে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ও অসুস্থ স্কুল-কলেজে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্ত সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় সমস্ত পরিবারকে কাঁটাতারের বাইরে সরকারি খরচে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। কাঁটাতারের ওপারে বহুকাল ধরে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের সরকারি চাকরি বিভিন্ন স্কিমের আর্থিক সুযোগসুবিধা এবং রেগা ও টুয়েপের কাজ সহ সর্বপ্রকার সরকারি সাহায্য দিতে হবে। রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমা থেকে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে বসবাসরত মানুষ আজকেট কনভেনশনে অংশগ্রহণ করেন৷ এদের মধ্যে ১৬ জন প্রতিনিধি তাঁদের দুঃসহ জীবনযন্ত্রণার কথা আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরেন। প্রতিনিধিরা বলেন, কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে বসবাসরত মানুষদের সঙ্গে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বি এস এফ-ও চরম অমানবিক আচরণ করে চলেছে। ছোট ছোট শিশুরা পর্যন্ত তাদের অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছে। তারা স্কুল থেকে ফেরার সময় লাইন করে দাঁড় করিয়ে তাদের বইয়ের ব্যাগ তল্লাশি চালানো হয়। কোনও কোনও সীমান্তে বি এস এফ জওয়ানরা কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে বসবাসরত মানুষ মাসে কতটা চিনি, চা পাতা, সাবান, তেল এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যবহার করবেন তা নির্ধারণ করে দেন। যারা আলোচনা করেছেন তারা জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে বি এস এফ জওয়ানদের বক্তব্য, সীমান্তে বেআইনি পাচার রুখতেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এমনটা করা হচ্ছে। কোনও কোনও বক্তা বলেছেন, কাঁটাতারের বাইরে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষ যেহেতু ইসলাম ধর্মাবলম্বী, প্রশাসনিক মদতে পরিকল্পনা করেই গত ছ-সাত বছর ধরে তাদের বিভিন্ন ঈদ উৎসবে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি কুরবানী পর্যন্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না। কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে বসবাসরত মানুষদের মোবাইল ফোন পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। আগরতলায় জয়পুর সীমান্তে কাঁটাতারের বাইরে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেবার ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কনভেনশনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক নয়ন সরকার সুদীপ সরকার ও শৈলেন্দ্র চন্দ্র নাথ এবং গণতান্ত্রিক আইনজীবী ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি হরিবল দেবনাথ। সামগ্রিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি প্রতিপালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় আজকের কনভেনশনে।

Desk Northeast Pratidhoni
Desk Northeast Pratidhoni
NorthEastPratidhoni, office: Khaja Manzil, Laddu chowmoni, West noabadi, Agartala, Tripura , India.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments