প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা ,,২২ জুন,,
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহার অধীনে অন্যান্য দপ্তরের মতোই বেহাল রয়েছে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর। অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর শাসনে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে প্রাথমিক এবং বুনিয়াদি শিক্ষা ব্যবস্থা। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত মুখ্যমন্ত্রীর সরলতার সুযোগ নিয়ে শিক্ষা দপ্তরের একাংশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা বিদ্যালয় শিক্ষাব্যবস্থাকে সচল রাখার পরিবর্তে রাজ্যের কিছু বিদ্যালয় গুটিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বেশি পরিশ্রম করছেন। স্কুল গুটিয়ে নেওয়ার ধান্দায় ব্যস্ত আধিকারিকরা খবরই রাখছেন না যে, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার তিন মাস বাদেও অধিকাংশ স্কুলে সঠিকভাবে পাঠ্য বই পৌঁছায়নি। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠ্য বই পায়নি বলে তাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। এপ্রিল থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার গত তিন মাস এক তৃতীয়াংশ পাঠ্যবই ছাড়াই কোন মতে টিকে আছে বিভিন্ন প্রাথমিক এবং বুনিয়াদি স্তরে স্কুলের পড়াশোনা। এপ্রিল থেকে শুরু করে জুন মাসের ২২ তারিখ পার হলেও এখনো প্রাথমিক স্তরে বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্য বই পায়নি ছাত্র-ছাত্রীরা। কিছু কিছু বিদ্যালয় পরিদর্শক পুরনো বই মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সবগুলি পাঠ্যবই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অধিকাংশেই বিদ্যালয় পরিদর্শকরা তা পারেননি। কারণ বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যবই এসসিইআরটি তৈরি করে ছাপিয়ে এখনো বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিস গুলিতে পাঠাতে পারেনি। সব বিষয়ে পাঠ্য বই না থাকায় শিক্ষকরা ক্লাসের মধ্যে কি পড়াবেন তা কিছুই বুঝতে পারছেন না। বিভিন্ন স্কুলে ইউনিট টেস্টের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু বই না থাকায় সেই টেস্ট সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। শিক্ষকরা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে বই আনতে গেলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে এখনো বই ছাপানো হয়নি। শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার প্রায় তিন মাস অতিক্রম হলেও এখনো স্কুলগুলিতে ঠিকভাবে পাঠ্য বই না যাওয়ার বিষয়টি শিক্ষা দপ্তরের চূড়ান্ত গাফিলতি বলেই অভিযোগ উঠেছে। খোদ শিক্ষক মহল দপ্তরের গাফিলতি নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবক মহল। মুখ্যমন্ত্রীর উপর তারা যে ভরসা রেখেছিলেন সেখানে তারা অনেকটা আশাহত হচ্ছেন। অভিযোগ দপ্তরের দায়িত্ব নেওয়া মুখ্যমন্ত্রী এখনো পর্যন্ত পাঠ্য বইয়ের বিষয়টিতে তেমন কোনো খোঁজখবরই করছেন না।
প্রসঙ্গত প্রাথমিক তথা বুনিয়াদি স্তরে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত রাজ্যের স্কুল গুলিতে সরকারিভাবে বিনামূল্যে পাঠ্য বই দেওয়া হয়। শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার আগেই এসসিইআরটি পাঠ্য বই ছাপিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় পরিদর্শকের কার্যালয় গুলিতে পৌছে দেওয়ার কথা ছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বই দেওয়ার পরই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু হয়। এতদিন অন্তত তাই হতো। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না । জুন মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত অধিকাংশ স্কুলে এক তৃতীয়াংশ পাঠ্য বই পায়নি ছাত্রছাত্রীরা। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের দুইটি বই কিংবা কোন ক্লাসের সর্বোচ্চ চারটি বই দেওয়া হয়েছে। সব বই দেওয়া হয়নি। উদাহরণ হিসেবে আগরতলা সদরের স্কুল গুলির কথাই বলা যেতে পারে। সদর বিদ্যালয় পরিদর্শকের অধীন অধিকাংশ স্কুলে সব ক্লাসেই সম্পূর্ণ পাঠ্য বই পাননি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয় পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে সমস্ত পাঠ্য বই এখনো ছাপানো হয়নি তাই ছাত্র-ছাত্রীদের বই দেওয়া হচ্ছে না। কবে নাগাদ বই দেওয়া হবে সেই বিষয়েও নিশ্চিত করে কিছুই বলা হচ্ছে না।
অন্যদিকে বিদ্যালয় গুলিতে যখন পাঠ্য বইয়ের অভাব তখনই খবর ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিম জেলায় ১৬০ টি বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার প্রশাসনিক প্রস্তুতির। খবর ছড়িয়েছে শিক্ষা দপ্তরের একাংশ ছাত্র-ছাত্রী কম থাকার বাহানায় স্কুল বন্ধ করে দিতে চাইছেন। এই জাতীয় একটি তালিকাও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পরে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হওয়ায় আপাতত দপ্তর সেই বিষয়টি থেকে সরে এসেছে। স্কুলে পাঠ্য বই না দিয়ে বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষা দপ্তরের তৎপরতা রাজ্যের বর্তমান সরকারের শিক্ষানীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য ইতিপূর্বে রতনলাল নাথ রাজ্য শিক্ষা মন্ত্রী থাকাকালীন তাকে নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও তিনি দপ্তরের কাজে অনেকটা সক্রিয় ছিলেন। ডিসেম্বর থেকেই তিনি পাঠ্য বই ছাপানোর বিষয়টি খোঁজখবর শুরু করতেন। দপ্তরে আধিকারিকদের চাপে রেখে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল রাখার চেষ্টা করতেন। যদিও সেই চেষ্টা করতে গিয়ে তার কাজে অনেক ভুল ত্রুটি ধরা পড়তো। সেগুলি নিয়ে সমালোচনা হত। কিন্তু তারপরও শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে মন্ত্রী রতনলাল নাথের চেষ্টার খামতি ছিল না। কিন্তু বর্তমান সময়ে মুখ্যমন্ত্রী নিয়ন্ত্রণাধীন শিক্ষা দপ্তরে তেমন কোন কাজই হচ্ছে না বলে অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকায় এই দপ্তরের দুর্বলতা নিয়ে কেউ মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছেন না। কিন্তু এইসব দুর্বলতা রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে তথ্যবিজ্ঞ মহলের দাবি।
Recent Comments