প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা,, ৩ আগস্ট,,
বিরোধী দলনেতার খোঁচা খেয়ে অবশেষে গন্ডাছড়া পরিক্রমা করার সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহা। গন্ডাছড়ায় হামলার ঘটনার ২৩ দিন পর আগামীকাল রবিবার ৪ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহা গন্ডাছড়া যাবেন। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী গন্ডাছড়া যাওয়ার বিষয়টি শনিবার সন্ধ্যায় সরকারিভাবে জানা গেছে। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী গন্ডাছড়া যাওয়ার ঘোষণার পরই গোটা গন্ডাছড়া মহকুমা জুড়ে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। শরণার্থী শিবিরের লোকেরা জানিয়েছেন গত দুদিন বৃষ্টিতে তাদের প্রচন্ড অসুবিধা হয়েছে। বৃষ্টির জল ঢুকে শরণার্থী শিবিরে তারা সঠিকভাবে ঘুমাতে পারেননি। কিন্তু তারপরও প্রশাসন থেকে তাদেরকে সঠিকভাবে সাহায্য করা হয়নি। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় হঠাতই শিবিরে প্রশাসনিক লোকেদের তৎপরতা দেখা যায়। শনিবার সন্ধ্যার পর সেখানে জেলাশাসক সহ আধিকারিকরা ছুটে গেছেন বলে শিবিরের কয়েকজন জানিয়েছেন। প্রশাসনিক আধিকারিকরা ছুটে গেছেন ক্ষতিগ্রস্ত নারায়ণপুর বাজার সহ অন্যান্য এলাকায়।প্রশাসনিক আধিকারিকরা ক্ষতিগ্রস্ত লোকেদের ‘কম্বল’ এবং বিভিন্ন সাহায্য বিতরণের আশ্বাস দিয়েছেন বলে খবর।
মুখ্যমন্ত্রীর সফরের প্রাক মুহূর্তে প্রশাসনের এই ধরনের বাড়তি তৎপরতা এবং লোভনীয় ঘোষণায় বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। একইভাবে গোটা মহকুমায় বাড়তি নিরাপত্তার জন্য পুলিশ টিচার টিএসআর মোতায়েন করা হয়েছে বলে খবর। জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার রাতে গন্ডাছড়া মহকুমাতেই অবস্থান করবেন বলেও খবর।
প্রসঙ্গত ১২ জুলাই পরমেশ্বর রিয়াং নামে এক জনজাতি যুবকের মৃত্যুর ঘটনার পর রাতভর হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে গন্ডাছড়া মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়। এক রাতে ১৬৫ পরিবারের উপর হামলা হয়। নৃশংস হামলার ঘটনায় বাড়ি ঘরে ভাঙচুর হয়। লুটপাট করা হয় এবং সবশেষে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। গৃহপালিত পশুর গলা কেটে হত্যা করা হয়।
সেই ঘটনায় ১৬৫ পরিবারের ৪ শতাধিক লোক রীতিমত সর্বসন্ত হয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। ১৩ জুলাই থেকে মহকুমা প্রশাসকের তরফে গন্ডাছড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে তাদেরকে শরণার্থী শিবিরে রাখা হয়। ১৩ জুলাই থেকে এখনো পর্যন্ত নারী-পুরুষ সবাই শরণার্থী হিসেবে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা সেদিনের ঘটনার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করেছিলেন।
ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত সর্বহারা লোকেদের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেছেন বিরোধী কংগ্রেস এবং সিপিআইএম নেতৃত্ব। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহমর্মিতা জানান এবং গোটা ঘটনায় সরকারের ভূমিকায় সমালোচনা করেন। গন্ডাছড়া পরিক্রমা শেষে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন বিরোধী সিপিআইএম নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। জিতেন্দ্র চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি রেখেছিলেন তিনি যাতে পুলিশ মহানির্দেশক এবং মুখ্য সচিবকে নিয়ে গন্ডাছড়ায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খবর নেন।
বিরোধী দলনেতার খোঁচা দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর গন্ডাছড়া সফরের খবর শোনা গেল তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের মাধ্যমে। মুখ্যমন্ত্রীর গন্ডাছড়া সফরের খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা ধলাই জেলা প্রশাসন মাঠে নেমে সার্বিক পরিস্থিতি ভালো দেখানোর চেষ্টায় নেমেছেন। এই প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য ইতিপূর্বে মন্ত্রী টিংকু রায় গন্ডাছড়ায় গিয়ে জনোরোশের মধ্যে মধ্যে পড়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর যাতে এই ধরনের কোন জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে না হয় তার জন্য প্রশাসন বিশেষভাবে তৎপর হয়েছে।
Recent Comments