প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, আগরতলা,, ২১ আগস্ট,,
“ত্রিপুরাতে এত বৃষ্টি আর কোনদিন হয়নি।” বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে এই বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহার। তিন দিনের বৃষ্টিতে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাড়িও জলবন্দী রয়েছে। বুধবার টি এস আর এবং পুলিশের উদ্ধারকারী দলের সহায়তায় তিনি রাবার বোটে নিজের বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে বিধানসভা এবং নিজের অফিস সচিবালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন ত্রিপুরার বিভিন্ন জেলায় ৩৭৫ মিলিমিটার, ৩৫০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এত বৃষ্টি আগে কখনো হয়নি। স্বাভাবিকভাবে পরিস্থিতি কি হতে পারে তা বুঝা যাচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন ত্রিপুরার বন্যা পরিস্থিতিতে বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে কথা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত এনডিআরএফ টিম চাওয়া হয়েছে রাজ্যে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পার্শ্ববর্তী শিলচর এবং অরুনাচল প্রদেশ থেকে এনডিআরএফ টিম পাঠাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ৩১৫ টি শিবির করা হয়েছে। সেই সমস্ত শিবিরে পাঁচ হাজারের বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন আমরা উদ্ধার কার্য এবং দুর্গতদের সাহায্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে সাহায্য করবো। তিন দিনের বৃষ্টি এবং বন্যা পরিস্থিতিতে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে সব জেলার জেলাশাসক এবং প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা মাঠে রয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
অন্যদিকে রাজধানীতে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য মাঠে রয়েছেন জেলাশাসক এবং পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার। পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার ডক্টর কিরন কুমার আগরতলায় বের হয়ে নৌকা করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে তিনি চন্দ্রপুর শ্রীলংকা বস্তি এলাকায় যান এবং সেখানে টি এস আর জোয়ানদের কাজ কর্মের খবর নেন। যদিও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিলেও বিভিন্ন স্থানে দুর্গতদের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। অভিযোগ প্রশাসনিকভাবে যেসব বোট নামানো হয়েছে প্রশাসনিক আধিকারিকরা এবং শাসকদলের সিকি আধুলি নেতারা সেগুলো দিয়ে ঘোরাফেরা করছেন। প্রকৃত অর্থে যারা দুর্গত তাদেরকে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে শিবিরে নেওয়ার ক্ষেত্রে বোটের সাহায্য তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না।
মাঝেমধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফটোশুটের জন্য কয়েকজনকে উদ্ধার করে সেগুলির ছবি মুখ্যমন্ত্রীর সামাজিক মাধ্যমে এবং বিভিন্ন স্থানে ভাইরাল করা হচ্ছে। খোদ আগরতলার শ্রীলঙ্কা বস্তিতে দেখা গেছে মহিলারা এবং শিশুরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন। প্রশাসনিক আধিকারিকদের ঘুরে জল দেখানোর জন্য বোট ব্যবহার করা হচ্ছে।
একাংশ ক্ষেত্রে শুকনা খাবার বিতরণের ক্ষেত্রেও চরম দুর্নীতি এবং স্বজন-পোষণ চলছে বলে অভিযোগ। দক্ষিণ চন্দ্রপুর এবং বলদাখালে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে মানুষজন অভিযোগ তুলছেন। অভিযোগে দক্ষিণ চন্দ্রপুরে এক শাসক নেত্রীর বাড়িতে ব্যাগ ভরে ভরে চিড়া এবং গুড় চলে যাচ্ছে। প্রকৃত দুর্গতরা অনাহারে পড়ে রয়েছেন। একইভাবে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যা দুর্গা তারা সঠিকভাবে সাহায্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠে আসছে। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস থাকলেও প্রকৃত দুর্গতদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং শাসকদলীয় কর্মীদের প্রচন্ড দুর্বলতার রয়েছে বলে খবর।
Recent Comments