Monday, June 30, 2025
Google search engine
Homeত্রিপুরার খবরকোথায় গেল স্বর্ণকুমারের লাল টুপি, কোথায় ছিল জ্যাক এন্ড জিল?জেল পলায়নের ঘটনায়...

কোথায় গেল স্বর্ণকুমারের লাল টুপি, কোথায় ছিল জ্যাক এন্ড জিল?জেল পলায়নের ঘটনায় রহস্য ভূমিকায় কারা কর্তৃপক্ষ।

প্রতিধ্বনি প্রতিনিধি,, বিশালগড়,, ১৫ মে,,

বিশালগড় কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে চাঞ্চল্যকর জেল পলায়নের ঘটনায় চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসন। পুলিশের মদত নিয়ে পলাতক স্বর্ণকুমার ত্রিপুরাকে খুঁজে বের করা তো দূরের কথা কারা কর্তৃপক্ষ গত ৩৬ ঘন্টায় জেল পলাতক আসামির একটি স্পষ্ট ছবি সংবাদ মাধ্যমের কাছে তুলে ধরতে পারেনি। এনএলএফটির কুখ্যাত জঙ্গির মত ভয়ানক কয়েদির জেল পলায়নের ঘটনায় নাগরিক সুরক্ষায় সতর্কতামূলক কোন উদ্যোগ নেই কারা কর্তৃপক্ষের। বিশালগড় কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের এই দুর্বলতা নিয়ে বিভিন্ন মহলের ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। কারণ জেল পলায়নের সঙ্গে সঙ্গেই পলাতক আসামী স্বর্ণকুমার ত্রিপুরার ছবি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত ছিল। এতে করে সাধারণ নাগরিকরা তার চেহারা চিনতে পেরে পুলিশ প্রশাসনকে সাহায্য করতে পারতেন। সতর্ক থাকতে পারতেন কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আশেপাশের নাগরিক মহল। কিন্তু সংশোধনাগারের সুপার রাকেশ চক্রবর্তী গত ৩৬ ঘন্টায় সংবাদমাধ্যমের কাছে পলাতক আসামির একটি স্পষ্ট ছবি তুলে দিতে ব্যর্থ রয়েছেন। পলাতক আসামির একটি জেরক্স ছবি দিয়ে সুপারকে তার প্রশাসনিক দুর্বলতার নগ্নতার ইজ্জত বাঁচাতে হচ্ছে।

জেল কর্তৃপক্ষের থেকে পাওয়া পলাতক স্বর্ণকুমার ত্রিপুরার জেরক্স ছবি

অভিযোগ সুপার রাকেশ চক্রবর্তী পলাতক আসামিকে খুঁজে বের করার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার সহ ভেতরের দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে বেশি সক্রিয় রয়েছেন। জেল পলায়নের ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই কারা কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি নিয়ে রহস্যজনক ভূমিকায় রয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভুল তথ্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা ১৩ মে রাত ১২: ৪৫ মিনিটে পালিয়ে গিয়েছিল। সিসি ক্যামেরাতে নাকি সেই ফুটেজ দেখা গেছে। সুপারের দাবি স্বর্ণকুমারের জেল পলায়নের ঘটনা জানা যায় সকাল ৮টায়। এই ধরনের তথ্য দিয়ে জেল সুপার তথা বিশালগড়ের এসডিএম রাকেশ চক্রবর্তী ২ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে পুলিশে মামলা করেছেন। বিশালগড় থানার পুলিশও সুপারের অভিযোগ মূলে দুই কারা রক্ষীকে গ্রেফতার করে হনু সেজে বুধবার মিডিয়া পোজ দিয়েছেন।

ছবি: জেল পলায়নের ঘটনায় পুলিশের হাতে ধৃত দুই কারারক্ষী

কিন্তু বাস্তবে এই জেল পরায়ণের ঘটনায় যারা মোটা টাকার বিনিময়ে স্বর্ণকুমার ত্রিপুরাকে মদত দিয়েছিল তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ যে সেল থেকে স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা পালিয়ে গিয়েছিল সেই সেলে ১৩ মে রাতে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত গার্ড কমান্ডার ছিলেন মফিজ মিয়া। ১টার পর মফিজ মিয়া সেলের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন পরবর্তী গার্ড কমান্ডার অমল দেববর্মাকে। অমল দেববর্মা কয়েদী সহ সেলের দায়িত্ব মফিজ মিয়ার কাছ থেকে বুঝে নেন এবং রাত ১টা থেকে ১৪ মে সকাল ৭টা পর্যন্ত সেই সেলের সামনে নিজের দায়িত্ব পালন করেন। গার্ড কমান্ডার ছাড়াও স্বর্ণকুমার ত্রিপুরার সেলের সামনে সেন্ট্রি ছিলেন ভানু পদ দেববর্মা। তারা সকালে ডিউটিতে থাকাকালীন সময় পর্যন্ত স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা সেলে নেই, এই ধরনের কোন তথ্য তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি। এতে করে বুঝা যায় সকাল ৭টা পর্যন্ত স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা নিজের ছেলের ভেতরেই ছিলেন। পরবর্তীকালে সকাল ৮ টায় স্বর্ণকুমার পালিয়ে যাবার ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান গেট কিপার জীবন দেববর্মা। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে স্বর্ণকুমার রাতে সেল থেকে পালিয়ে গেলে মফিজ মিয়া, অমল দেববর্মা এবং ভানুপদ দেববর্মা কেন তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য দেননি। যদি মফিজ মিয়া ডিউটি থাকাকালীন সময়ে ১২:৪৫ মিনিটে স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা পালিয়ে যেত তাহলে রাত ১ টায় ডিউটি গ্রহণ করার সময় গার্ড কমান্ডার অমল দেববর্মা এবং সেন্ট্রি ভানুপদ দেববর্মার নজরে সেই বিষয়টি ধরা পড়ার কথা ছিল। কিন্তু অমল দেববর্মা এই বিষয়ে কিছুই জানাননি। ফলে রাতে ১২: ৪৫ মিনিটে স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা পালিয়া যাওয়ার যে তথ্য সুপার রাকেশ চক্রবর্তী পুলিশের কাছে দিয়েছেন তা আদৌ সত্য কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে জেল সূত্রের খবর কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানার পর সঙ্গে সঙ্গে জেলের ভেতরে বিপদ সংকেত তথা হুইসেল বাজানো হয়। অন্য সমস্ত কয়েদিদের তাদের নিজস্ব সেলের মধ্যে ঢুকানো হয়। গতকাল ১৪ মে বিশালগড় কেন্দ্রীয় কারাগারে সেই বিপদে সংকেত তথা হুইসেল বাজানো হয়েছিল ঠিক ৮:৪৫ নাগাদ। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে রাত ১২: ৪৫ মিনিটে কয়েদী পালানোর পর এবং সকাল ৮টায় বিষয়টি সরকারিভাবে জানার পর কেন ৪৫ মিনিট পরে বিপদ সংকেত বাজানো হয়েছিল। অভিযোগ সুপার রাকেশ চক্রবর্তী কোন ধরনের সত্যতা যাচাই না করেই জেলের দুর্নীতিবাজ ভারপ্রাপ্ত জেলার দেবাশীষ শিলের কথামতো ভুল তথ্য দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। এতে করে কয়েদির জেল পলায়নের ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন পুলিশের কর্মকর্তারাও।

একইভাবে সুপারের নেতৃত্বে একটি মহল সংশোধনাগারের আই জি -কেও ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন বলে অভিযোগ। সূত্রের দাবি স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা জেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বহু লক্ষ টাকার লেনদেন রয়েছে। এক্ষেত্রে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠে এসেছে ভারপ্রাপ্ত জেলার দেবাশীষ শিলের বিরুদ্ধে। সূত্রের দাবি এর আগে দুই দফায় জেল থেকে পালিয়ে ছিলেন স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা। সেই ক্ষেত্রে কুখ্যাত জেল পলাতক হিসেবে প্রশাসনিক নির্দেশে জেলের ভিতর নির্দিষ্ট পোষাকের সঙ্গে লাল টুপি পড়ানো হতো স্বর্ণকুমার ত্রিপুরাকে। কিন্তু দেবাশীষ শিলের নির্দেশে দুই মাস আগে থেকে স্বর্ণকুমার ত্রিপুরার পোশাক থেকে সেই টুপি খুলে দেওয়া হয়েছিল। এতে করে ধারণা করা হচ্ছে দুই মাস আগে থেকেই জেলারের পরোক্ষ মদতে এই জেল পলায়নের পরিকল্পনা চলছিল। সেই পরিকল্পনা অঙ্গ হিসেবে নিজের সেলের দুইটি “গড্রেজ”কোম্পানির তালার নকল চাবি কারারক্ষীদের মদতে সংগ্রহ করেছিলেন স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা। সেই তালা খুলেই তিনি পালিয়ে গেছেন । সেল থেকে বের হওয়ার পর সে পুনরায় বাইরে থেকে সেই তালা লক করে চলে যান। এছাড়াও জেলার দেবাশীষ শীলের নির্দেশে জেলের দুই কুকুর “জ্যাক” এবং “জিল”-কে সেদিন রাতে অন্যত্র নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে আসছে। যার ফলে কয়েদি পালানোর সময় কুকুরগুলো কোন শব্দ করে নি। সূত্রের দাবি কয়েদী পলায়নের ঘটনায় সুপারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলেই সমস্ত তথ্য সামনে উঠে আসবে।

স্বর্ণকুমার ত্রিপুরার জেলপলায়নের চাঞ্চল্যকর তথ্য সহ সিআরপিএফ থেকে শুরু করে জেল পুলিশে আসার পর স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা পলায়ন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত জেলার দেবাশীষ শিলের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগের তথ্য সহ সংবাদ আগামী দিনে তুলে ধরা হবে। তথ্যনির্ভর সংবাদ পড়তে গুগলে গিয়ে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট লিংক www.northeastpratidhoni.com দেখার জন্য পাঠকদের আবেদন রইল।

Desk Northeast Pratidhoni
Desk Northeast Pratidhoni
NorthEastPratidhoni, office: Khaja Manzil, Laddu chowmoni, West noabadi, Agartala, Tripura , India.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments